বায়ুদূষণের সঙ্গে শীতকালীন রোগের প্রকোপ, ঠাঁই নেই হাসপাতালে

শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে অভিভাবকদের ভিড়

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম রাজধানী ঢাকা। শীত মৌসুমের শুষ্ক হাওয়ায় ধুলার কারণে এই দূষণের মাত্রা এখন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তার সঙ্গে হঠাৎ করেই শীতের তীব্রতা বেড়ে যায় গত বছরের শেষ সপ্তাহে। একে তো ঢাকার বায়ুদূষণ, তার ওপর তীব্র শীতের প্রকোপ−দুইয়ে মিলে নানান রোগে আক্রান্তদের ভিড়ে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই অবস্থা।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে শনিবার (৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এবং অন্যান্য অসুস্থতায় (জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ এবং জ্বর) আক্রান্তের হার গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। বেড়েছে মৃতের সংখ্যাও। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বায়ুদূষণের সঙ্গে হঠাৎ করেই যোগ হয়েছে তীব্র শীত। যে কারণে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, শীতের এই সময়টাতে বায়ুদূষণের সঙ্গে হঠাৎ করে শৈত্যপ্রবাহ যোগ হয়েছে। একারণে অ্যাজমা, ডায়রিয়া, ব্রংকিউলাইটিস, নিউমোনিয়া, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব মতে, গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত নানান অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন তিন লাখ ১৭ হাজার ৪৪৯ জন। এর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন ৫০ হাজার ৭৮৬ জন, ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ২৫ হাজার ৬৫৩ জন এবং শীতকালীন অন্যান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৪১ হাজার ১০ জন। এই অন্যান্য অসুস্থতার ভেতরে স্বাস্থ্য অধিদফতর জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ এবং জ্বরকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

এই সময়ে এসব অসুখে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬১ জন। এর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৭ জন, ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪ জন এবং অন্যান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩০ জন। শুধু নভেম্বর মাসে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে মারা গেছেন ১৫ জন, ডিসেম্বরে মারা গেছেন ২ জন, ডায়রিয়াতে ডিসেম্বরে কেউ মারা না গেলেও নভেম্বরে মারা গেছেন ৪ জন। এছাড়া অন্যান্য অসুস্থতায় নভেম্বরে মারা গেছেন ২৯ জন, আর ডিসেম্বরে মারা গেছেন ১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২০ হাজার ৪৪৬ জন, ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৫ হাজার ৮৮১ জন আর অন্যান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩০ হাজার ৪৩২ জন। মারা গিয়েছিলেন ১১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছরে দেশের ২০টি জেলা থেকে এ সংখ্যা আসতো স্বাস্থ্য অধিদফতরে। কিন্তু এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সারাদেশ থেকে নেওয়া শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সে নিয়ম অনুসরণ করেই চলতি বছরে পুরো দেশ থেকে শীতকালীন অসুখ এবং আক্রান্তের সংখ্যা সংগ্রহ করছে কন্ট্রোল রুম। ফলে সে হিসাবে চলতি বছরে এমনিতেই এ সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে যাবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তবে হঠাৎ করে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ার কারণেও রোগী সংখ্যা বেড়েছে।

ডা. আয়শা আক্তার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা রেকর্ড করেছে। বায়ুদূষণ হয়ে গেলো দেশের এক নম্বর দূষণ। শীতকালে বায়ুদূষণ আরও বেশি বেড়ে যায়, বাতাসে ধূলিকণা আরও বেশি ওড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, শীতের সময়ে বাইরে বের হলে ধুলাবালু নাকে বেশি লাগে।

ধুলাবালুর সঙ্গে হাঁচি-কাশি বেড়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো সবই ছোঁয়াচে রোগ। বাতাসের মাধ্যমে একজনের কাছ থেকে আরেকজনে ছড়ায়। হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত একজনের থেকে একহাত দূরত্বে থাকা আরেকজন সুস্থ মানুষ আক্রান্ত হবেন হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। এজন্য নাক-মুখে ‍রুমাল চেপে হাঁচি-কাশি দিতে হবে, যাতে সেটি না ছড়াতে পারে। দূষিত বাতাসের কারণে অ্যাজমা আক্রান্তদের হাঁপানি বেড়ে যাচ্ছে, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ যা ফুসফুসের এক ধরনের জটিল রোগ) বাড়ছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শৈত্যপ্রবাহের সময়ে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল, তবে শীত একটু কমে আসার কারণে আবার রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে।