বাড়ির আশপাশে ময়লা থাকলে জরিমানা, বায়ুদূষণ রোধে ১৩ দফা সুপারিশ

সুপ্রিম কোর্ট

বাড়ির আশপাশে ময়লা থাকলে মালিককে জরিমানা করাসহ ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে ১৩ দফা সুপারিশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি।

রবিবার (১২ জানুয়ারি) বিচারপতি এফআরএম  নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ওই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হয়। এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে গত ৬ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশগুলো প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টে দাখিল হয়। সেই আবেদনের ওপরে রবিবার শুনানি হয়।

আদালতে এ বিষয়ে রিট মামলার শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল  মাহমুদ বাশার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের গত ২৬ নভেম্বরের আদেশ অনুযায়ী, ঢাকা শহরের চারপাশে বায়ুদূষণের কারণ খুঁজে বের করা এবং বায়ুদুষণ রোধে ও সমাধান করার জন্য নির্দেশনা প্রণয়নের লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে। ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কমিটি ঢাকা শহরের চারপাশে বায়ুদূষণের কারণ খুঁজে বের করা এবং বায়ূদূষণ রোধে ১৩ দফা সুপারিশ দিয়েছেন। সুপারিশগুলো হলো—

ক. উন্নয়ন কার্যক্রমে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার জন্য প্রতি বছরের কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে। সিটি করপোরেশন উক্ত কর্ম পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারলে, সিটি করপোরেশন জরিমানা আরোপ করতে পারে। এক্ষেত্রে দায়ী ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে।

খ. ধুলাবালি বাতাসের সঙ্গে যেন মিশে না যায়, সেজন্য নির্মাণ সামগ্রী আবৃত করে রাখতে হবে। প্রতিটি নির্মাণ সাইটে পানি ছিটানোর বিধান করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে নির্মাণ সাইটে পানি ছিটাতে বাধ্য করার জন্য দরপত্রে বিধান সংযোজন করতে হবে।

রাস্তায় কোনও ধরনের নির্মাণ সামগ্রী রাখা যাবে না। নির্মাণাধীন স্থাপনা আবৃত করে রাখতে হবে। যে এলাকায় নির্মাণ কাজ হবে, সেই এলাকার সংশ্লিষ্ট সিটি কারপোরেশন বা পৌরসভা বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিজেরাই তা পরিষ্কার করবে।

গ. ইউটিলিটি সংস্থা রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করলে তা প্রত্যহ মেরামত করতে হবে। যে সব স্যুয়ারেজ লাইন বড়— সেখানে টানেলিংয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। কাজ করার সময় যতটুকু পাইপ বসানো যায়, ততটুকু খোলা রেখে কাজ করতে হবে।

ঘ. রাস্তা নির্মাণ/মেরামতের সময় বিটুমিন পোড়ানো হয় এবং পরে বালি দেওয়া হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় না। বিদেশের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বায়ুদূষণ হ্রাস করা যায়। রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডারে মাটি উঁচু অবস্থায় থাকায়, সেখান হতে মাটি রাস্তায় চলে আসে। এক্ষেত্রে রাস্তার ডিভাইডারের মাটি সমান রেখে ঘাস লাগাতে হবে।

ঙ. পৌরবর্জ্যের সঙ্গে গৃহস্থালী বর্জ্যও বায়ুদূষণ করছে। বর্জ্য কখনও খোলা অবস্থায় রাখা যাবে না। বাড়ির আশপাশ বাড়ির মালিক নিজে পরিষ্কার করবেন। বাড়ির আশপাশে ময়লা থাকলে জরিমানা আরোপ করতে হবে। সিটি করপোরেশন পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রণোদনা, শান্তি ও ট্যাক্স রিবেট দিতে পারে। নালা/নর্দমার বর্জ্য/ময়লা শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বে অপসারণ করতে হবে। সব ধরনের বর্জ্য পোড়ানো বদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।

চ. সিটি করপোরেশন ইউটিলিটি সার্ভিসের কাজ শুরু করার আগে সার্ভিস চার্জ নিয়ে নেয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থা কাজ করার পর রাস্তা সময় মতো মেরামত করা হয় না। এক্ষেত্রে যিনি কাজ করবেন তাকে রাস্তা মেরামতের দায়িত্ব দেওয়া যায় কিনা বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগ পরীক্ষা করে দেখতে পারে। এক্ষেত্রে রাস্তা মেরামতের মান যথাযথ হয়েছে কিনা তা সিটি করপোরেশন তদারকি করবে।

ছ. বড় বড় প্রকল্পের উন্নয়ন কার্যক্রমে ঠিকাদারকে আরোপিত শর্ত পূরণ করতে হবে। তাদেরকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। সকল টেন্ডার ডকুমেন্টে বায়ুদূষণ রোধ বা হ্রাসের কার্যক্রমের অংশ থাকতে হবে।

জ. হাতের ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করায় ধুলাবালি বেশি পরিমাণে ছড়ায়। সিটি করপোরেশন এক্ষেত্রে আধুনিক সুইপিং মেশিন ব্যবহার করতে পারে।

ঝ. রাজউক ভবনের নকশা অনুমোদনের সময় বায়ুদূষণ রোধ ও হ্রাসের বিষয়ে শর্তারোপ করবে। এতে সংশ্লিষ্ট ভবনের মালিক ও ঠিকাদার কাজ করার সময় বায়দূষণের বিষয়ে সতর্ক থাকবে।

ঞ. বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ময়লা ও বর্জ্য রাস্তায় ফেলছে এবং ময়লা পোড়ায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দূষণের বিষয়ে গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য নির্দশনা দেওয়া যায়।

ট. ছোট ছোট হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। হাসপাতালের বর্জ্য রাস্তায় রাখায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি মারাত্মক বায়ুদূষণ হচ্ছে। এজন্য বিদ্যমান আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে।

ঠ. যেখানে যানজট ও ধোঁয়া বেশি হয়, সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছিটানোর জন্য Fixed Sprayer বসানো যায়। সিটি করপোরেশন ওয়াসার সহযোগিতায় তা বাস্তবায়ন করতে পারে। যারা নির্মাণ কাজ করছে তাদেরকেও দিনে ন্যূনতম দুইবার পানি স্প্রে করতে হবে। এছাড়া যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মহানগরীতে স্থাপিত অটো সিগন্যাল চালু রাখতে হবে।

ড. পরিবেশ দুষণকারী অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারি নির্মাণ কাজে ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহার করতে হবে। এ বিষয়ে জারি করা পরিপত্র অনুসরণ করতে হবে।

এছাড়াও হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে গৃহীত কার্যক্রমের একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন পাঠানো এবং ধার্য তারিখে পূর্ণাঙ্গ  নির্দেশিকা প্রণয়নে সময় দেওয়ার জন্য আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।