বিমানের দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ, তদন্তে কমিটি

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ (ছবি- ইন্টারনেট) বাড়তি ফ্লাইটের চাপ সামাল দিতে হজ মৌসুমে উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্স। যদিও বিমানের লিজ উড়োজাহাজ সংগ্রহ করা নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনাও ঘটেছে। আগামী তিন বছর হজের মৌসুমে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য দুটি বড় আকারের উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্সটির। তবে এবারও  উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে,হজ মৌসুমে ফ্লাইট শিডিউল ঠিক রাখতে দুটি উড়োজাহাজ ড্রাই লিজ নেওয়ার জন্য ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর দরপত্র ঘোষণা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। দরপত্র যাচাই বাছাইয়ের জন্য টেকনিক্যাল-ফাইন্যান্সিয়াল সাব কমিটি গঠন করে বিমান। তবে দরপত্র যাচাই বাছাইয়ে অনিয়ম হয়েছে এমন অভিযোগ এসেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে। অভিযোগ পাওয়ার পর অনিয়ম তদন্ত করতে ৬ জানুয়ারি তিন সদস্যের একটি কমিটি করে মন্ত্রণালয়। কমিটির   আহ্বায়ক করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনকে। এছাড়াও কমিটিতে আছেন বিমানের পরিচালক (পরিকল্পনা) মো.মাহবুব জাহান খান ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের একজন প্রতিনিধি।  এ কমিটিকে  ১২ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। যদিও পরবর্তীতে সময় বাড়ানোর আবেদন করে কমিটি।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে বৈঠক করে বিমানের উড়োজাহাজ লিজ করা সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করেছে। লিজের দরপত্র, কমিটির সিদ্ধান্ত, লিজের নিয়ম নীতি দেখে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে এ কমিটি।

সূত্র জানায়,আগামী তিন বছর হজের তিন মাসের জন্য যাত্রী পরিবহনে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দরপত্র আহ্বান করে বিমান। যাতে শর্ত ছিল ২০ বছরের পুরনো এয়ারক্রাফটও ব্যবহার করা যাবে। তবে ২০ অক্টোবর ঐ শর্ত পরিবর্তন করে ২০ বছরের পুরনো এয়ারক্রাফট ব্যবহারের পরিবর্তে ১২ বছরের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়। এ শর্তের কারণে দরপত্র থেকে বাদ পড়ে যায় অংশগ্রহণকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে বিমান প্রাথমিকভাবে ফ্রান্সের এভিকো চার্টার্ড প্রতিষ্ঠান থেকে উড়োজাহাজ ইজারা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এ প্রতিষ্ঠানটির উড়োজাহাজ নিরীক্ষার কাজও চলমান রয়েছে। তবে ইজারা না পাওয়া একটি এয়ারলাইন্স দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়েছে এমন অভিযোগ করে মন্ত্রণালয়ে।

অভিযোগে বলা হয়,নির্দিষ্ট একটি সংস্থাকে সুবিধা দিতেই শেষ মুহূর্তে দরপত্রে শর্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। দরপত্রের প্রথমে শুধুমাত্র ২০২০ সালের জন্য লিজ নেওয়ার কথা বলা হলেও পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করে তিন বছর করা হয়। প্রথম প্রকাশিত দরপত্রে ২০২১ ও ২০২২ সালের জন্য কোনও দরের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

উল্লেখ করা যেতে পারে,এর আগেও লিজের উড়োজাহাজ নিয়ে লোকসানে পড়তে হয় বিমানকে। মিসরের ইজিপ্টএয়ার থেকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে লিজে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ নিয়ে বিমানকে প্রতি মাসে ১০ কোটি টাকা করে লোকসান দিতে হয়েছিল। অসম লিজ চুক্তির কারণে সেই লিজের উড়োজাহাজ ফেরত দিতে বেগ পেতে হয় বিমানকে। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় গত বছরের শেষের দিকে মিসর থেকে আনা দুটি উড়োজাহাজ ফেরত দিতে পারে বিমান। এ দুটি উড়োজাহাজের জন্য বিমানকে কমপক্ষে ৬০০ কোটি টাকা লোকসান ‍গুনতে হয়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন,বিমান সরকারি ক্রয় নীতিমালা অনুসরণ করেই দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে । ‍হজের মৌসুমে কোনও উড়োজাহাজ যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়লে চাপ বাড়ে,এ কারণে বিমান বোর্ড উড়োজাহাজের বয়সসীমা ২০ বছরের বদলে ১২ বছর নির্ধারণ করেছে। এছাড়া, লিজের যেসব শর্ত ছিল, যেসব সংস্থা তা অনুসরণ করবে না তারা স্বাভাবিকভাবেই বাদ পড়বে। কোনও অনিয়ম করার সুযোগ নেই। তারপরও মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করেছে,এতে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।