ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে বিশ্বমানের ঢাকা গড়ার ইশতেহার ইশরাকের

ইশতেহার ঘোষণা করেন ইশরাক হোসেন, ছবি- সাজ্জাদ হোসেন

আধুনিক ও বিশ্বমানের বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে ১৩ দফা এবং ১৪৪ প্রতিশ্রুতির ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘নাগরিক সেবা ও ঢাকার ঐতিহ্য রক্ষা করে নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হবে। যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন, ওয়ার্ডভিত্তিক ব্যায়ামাগার আধুনিক করা হবে।’

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন ইশরাক হোসেন।

তিনি বলেন, ‘নগরবাসীকে সস্তা দামে বিষমুক্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে বিশেষ স্থানে কৃষক মার্কেট ও নাইট মার্কেট চালু করা হবে। রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। নদী দূষণ রোধ করে নদী পর্যটন চালু করা হবে।’

দুর্নীতিমুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশরাক বলেন, ‘সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানবাধিকার রক্ষা, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সম্মিলনে মাদকমুক্ত, যানজট-দূষণমুক্ত, মশা ও জলাবদ্ধতামুক্ত ভারসাম্যমূলক ও পরিবেশসম্মত বিশ্বমানের বাসযোগ্য এক অত্যাধুনিক ঢাকা গড়ে তুলবো।’ 

দক্ষিণ সিটির এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘রাজধানীর উন্নয়নে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে। সিনিয়র সিটিজেন সার্ভিস চালু করা হবে। গ্রন্থাগার ও জাদুঘর আরও আধুনিকায়ন করা হবে।’

আসন্ন সিটি নির্বাচনে ভোটারদের মূল্যবান ভোট দিয়ে মেয়র পদে তাকে জয়ী করার জন্য আহ্বান জানান ইশরাক।

যা আছে ইশতেহারে

ইশতেহারের প্রথম দফায় বলা হয়, গণশুনানির মাধ্যমে নগরবাসীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা। হোল্ডিং ট্যাক্স সেক্টরকে সব প্রকার দুর্নীতিমুক্ত করা। নাগরিকদের কাছ থেকে আদায় করা করের টাকা কোন কোন খাতে ব্যয় হবে, তা বছরে কমপক্ষে দুবার করদাতাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে। নগরের আয়-ব্যয়ের হিসাব রক্ষণে স্বচ্ছতা প্রণয়ন করা হবে।

নাগরিক বিনোদনের বিষয়ে ইশরাক হোসেন প্রতিশ্রুতি দেন, সিটি করপোরেশনের যেসব উন্মুক্ত উদ্যান, নদী ও খাল বেদখলে আছে, সেগুলো দখলমুক্ত এবং ওয়ার্ডভিত্তিক ক্ষুদ্র পরিসরে বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

ইশতেহার ঘোষণা করছেন ইশরাক হোসেন, ছবি- নাসিরুল ইসলাম

মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকার যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের এই মেয়র প্রার্থী। এতে বলা হয়েছে—প্রতিটি ফুটওভার ব্রিজে পর্যায়ক্রমে এলিভেটর/এস্কেলেটর স্থাপন ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধা সংবলিত স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধাসহ অত্যাধুনিক ও পরিচ্ছন্ন যাত্রী বিশ্রামাগার এবং টাউটমুক্ত যাত্রীবান্ধব পরিচ্ছন্ন বাস টার্মিনাল করা হবে। দ্রুতগামী ইলেকট্রিক্যাল বাস সার্ভিস ও স্মার্ট বাস স্টেশন নির্মাণ করা হবে।

ইশতেহারে নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ব্যায়ামাগারে অত্যাধুনিক ‘প্রাইমারি হেলথ চেকআপ সেন্টার’ স্থাপন এবং  জনসমাগম স্থলে ‘ফুড কোর্ট’ তৈরি করা হবে। একইসঙ্গে করপোরেশনের কমিউনিটি হাসপাতালগুলোতে নারীদের মাতৃকালীন এবং পাঁচ বছর পর্যন্ত সব শিশুর বিনা খরচে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে।

ইশতেহারে শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ে বলা হয়েছে, স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টারে নৈশকালীন শিক্ষা কার্যক্রম চালু এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ বিনামূল্যে বিভিন্ন আইটি কোর্স চালু করা হবে। 

জননিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে সব সড়ক, লেন ও বাইলেন সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসারও প্রতিশ্রুতি দেন ইশরাক।

বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের মতামত নিয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে ইশতেহারে।

মেয়র নির্বাচিত হলে স্বল্পমেয়াদে প্রথম ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচি গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে।

ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডির আ স ম আব্দুর রব, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।