সিটি নির্বাচন ঘিরে ঢাকার পাড়া-মহল্লায় উৎসবের আমেজ





নির্বাচনি প্রাচারণায় পোস্টার টাঙানো হয়েছে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণের বাকি মাত্র দুই দিন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা। ভোটের দিন যত কাছে আসছে প্রচারণা তত জোরদার হচ্ছে। নির্বাচনি গান, মাইকিংয়ের সঙ্গে পোস্টার, ব্যানারে ছেয়ে যাওয়া ঢাকা এখন উৎসবের নগরী। নির্বাচন ঘিরে পাড়া-মহল্লায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। তবে দুয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় প্রার্থীসহ ভোটারদের মধ্যে কিছুটা শঙ্কাও কাজ করছে।

নতুন করে ভোটের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করায় প্রচারণা শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) মধ্যরাতে। এদিন থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় কোনও ব্যক্তি জনসভা বা কোনও অনুষ্ঠান আহ্বান, এসবে যোগদান কিংবা কোনও মিছিল, শোভাযাত্রা করতে পারবেন না।
সরেজমিন মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাড়া-মহল্লা ছেয়ে গেছে নির্বাচনি পোস্টারে। রাস্তায় রাস্তায় বাজছে নির্বাচনি গান। মাঝে মাঝে ভোটের স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠছে বিভিন্ন এলাকা। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাদের কেউ কেউ পথসভা করছেন, কেউ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমর্থন চাইছেন, কেউ নিজ এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের মিছিল করে ভোট চাইছেন।
প্রচারণায় উৎসবমুখর নগরবাসীকয়েকটি ওয়ার্ডের প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন উৎসবের ভোটের প্রতিক্ষায় আছেন তারা। সাধারণ মানুষ তাদের পক্ষে আছেন বলে দাবি তাদের।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার ৩১ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, পোস্টারে পোস্টারে ঢাকা পড়েছে পুরো এলাকা। এই এলাকায় প্রার্থীদের প্রচারণার আওয়াজ তুলনামূলক কম, বরং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে এই ওয়ার্ডে রিকশায় মাইক লাগিয়ে ভোট চাওয়ার বিষয়টি চোখে পড়ার মতো। ওয়ার্ডটিতে কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শঙ্কার কথা বললেও স্বতন্ত্রসহ অন্য প্রার্থীরা বললেন, পরিবেশ ভালোই আছে।
৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ আসনে কাউন্সিলর প্রার্থী ডেইজী সারোয়ার বলেন, ‘আমার প্রচারণা চলছে। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি আমি। গিয়ে উন্নয়নের কথা তুলে ধরে ভোট চাচ্ছি। নিয়মিতভাবেই প্রচারণা করছি। কিছু সমস্যা তো আছেই। প্রতিপক্ষের হুমকি-ধমকি, ক্যাম্প ভেঙে দেওয়া, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা।’ নির্বাচনের দিন এসব ঘটনা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
প্রচারণায় টাঙানো হয়েছে পোস্টারতবে এমন কোনও অভিযোগ নেই একই ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন ফরহাদের। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ ভালো আছে। আগের চেয়ে অন্তত ভালো আছে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকাতেও নির্বাচন ঘিরে উৎসবের আমেজ। পোস্টারে পোস্টারে যেমন ছেয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকা, তেমনি ব্যস্ততা দেখা গেলো নির্বাচনি ক্যাম্প তৈরিতে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মাহবুবুর রহমান মাহবুব বললেন, ‘নির্বাচনের জন্য সুন্দর পরিবেশ আছে। আমি আজ দিনভর গণসংযোগ করেছি। ভোটাররাও তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন, আমাদের সঙ্গে আছেন বলে জানিয়েছেন তারা।’
প্রচারণায় টাঙানো হয়েছে পোস্টারএই এলাকার কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের মধ্যে শঙ্কা যেমন আছে, তেমনি আছে নির্বাচনের আমেজও। তবে প্রার্থীদের প্রচারণার তীব্র আওয়াজে খানিকটা বিরক্ত তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের একজন ভোটার বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশটা উৎসবমুখরই হওয়া উচিত। তবে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা বাড়ে।’ প্রার্থীদের প্রচারণার সময় কিছুটা সহনীয় হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ভোটার সংখ্যা সাড়ে ৫৪ লাখ। এর মধ্যে উত্তর সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ এবং দক্ষিণ সিটিতে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ড আছে ৫৪টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি এবং দক্ষিণে সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি। উত্তর সিটিতে সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী ২৫১ জন, সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর প্রার্থী ৭৭ জন। আর দক্ষিণ সিটিতে সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী ৩২৬ জন, সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী ৮২ জন।