‘যিনি নগরবাসীর কথা ভাবেননি তাকে ভোট দেবো কেন?’

ভোট কেন্দ্রে ভোটার নেইভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়েও ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন একাধিক ভোটার। তারা মেয়রপ্রার্থীদের সমালোচনা করে বলেন, ‘যে নগরীতে ভোটের আগে মাইকের শব্দে ঘুমানো যায়নি, বাচ্চারা পড়তে পারেনি, যে নগরীর ভবিষ্যৎ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে নগরবাসীর কথা ভাবেননি, তাকে ভোট দেবো কেন? আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির প্রার্থী নয়, আমি সব প্রার্থীর কথাই বলছি।’ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলার সময় সিদ্বেশ্বরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত একাধিক ভোটার এমন মন্তব্য করেন।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিদ্বেশ্বরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে  দেখা গেলো মাঠের ভেতরে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক-ভোটারদের জটলা। সেখানে কথা হয় দুই নারীর সঙ্গে। ‘ভোট দিয়েছেন, না দেবেন?’— এমন প্রশ্নের জবাবে তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভোট কি আসলেই দিতে হবে? যে নগরীতে ভোটের আগে মাইকের শব্দে ঘুমাতি পারিনি, স্কুলগামী বাচ্চারা পড়তে পারেনি, পোস্টারের জন্য আকাশ দেখা যায়নি, সে নগরীর মেয়র নির্বাচনে কেন ভোট দেবো? যে নগরীতে লেমিনেটেড পোস্টার নিয়ে এত সমালোচনা হওয়ার পরও প্রার্থীরা সেসব পোস্টার সরাননি, তাদের ভোট দেবো? মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগেই যিনি নগরবাসীর ভালোমন্দের কথা ভাবেননি, তাকে ভোট দেবো কেন?’

এ সময় পাশে থাকা দ্বিতীয় নারী বললেন, ‘গত কয়েক বছর ধরেই বর্ষা মৌসুমে ঢাকার প্রতিটি গলিতে প্লাস্টিকের কারণে পানি জমে থাকে। কেউ ভাবলো না, এসব প্লাস্টিক শেষে কোথায় যাবে? ঢাকা শহরের জন্য তারা কেউ ভাবেননি। তাই আমি কাউকেই ভোট দেবো না। আমার জায়গা থেকে এটা আমার প্রতিবাদ।’

দুপুর ১২টার দিকে সিদ্বেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় দেখা গেছে, নারীদের জন্য নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রগুলোয় নারীদের উপস্থিতি কম। পোলিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে—একটি বুথে ৩৩৪ জন নারী ভোটারের বিপরীতে ভোট পড়েছে মাত্র ২০টি।  

এই কেন্দ্রের পোলিং অফিসার মাখন লাল দাশ বলেন, ‘সকালের দিকে ভোটার সংখ্যা একেবারেই কম ছিল। এখন কিছুটা বাড়ছে, তবে, তাও অনেক কম।’

মগবাজার বিশাল সেন্টার ভোটকেন্দ্রের সাত নম্বর পোলিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বুথে ৩৪৫ জনের বিপরীতে ভোট পড়েছে নয়টি। পোলিং অফিসার মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা কম।’

সিদ্বেশ্বরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে কথা হয় তিতাস গ্যাসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনিও নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আগে দেশে দুই ঈদের চেয়ে বেশি উৎসব ছিল ভোটের দিন। আগে মানুষ দুই থেকে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও ভোট দিয়েছে। সারাদিন ভোটকেন্দ্রে থেকেছে। চা খেয়েছে, গল্প করেছে। নারীরা হয় খুব ভোরে দলবেঁধে এসে ভোট দিয়ে রান্না করতো অথবা রান্না শেষে দলবেঁধে আসতো ভোট দিতে। অথচ এই শীতের দিনে এমন রৌদ্রকরোজ্জ্বল সকালে কেউ নেই ভোট দিতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভোট দিতে এসেছি, আমার স্ত্রী আসেননি। এখানে আসার পরও তাকে ফোন করে ভোট দিতে আসার জন্য বললাম। কিন্তু তিনি আসবেন না, তার কোনও উৎসাহ নেই। কেন এমন মানসিকতা হলো ভোটারদের, সেটা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এটা ভেবে দেখা দরকার।’

ভোটাররা কি সবাই ঘুমাচ্ছেন প্রশ্ন করে মগবাজারের বিশাল সেন্টারের সামনে মোশাররফ হোসেন নামের একজন ভোটার বলেন, ‘একটা প্রশ্ন করতে চাই আপনাকে। মেয়রকে ইদানীং বলা হচ্ছে নগরপিতা।’ কিন্তু মেয়র আসলে নগরপিতা হবেন না নগরসেবক হবেন, এমন প্রশ্নও রেখেছেন তিনি।