পোস্টার অপসারণ চলছে, ধ্বংস করা হবে কীভাবে?

রাস্তায় ফেলে রাখা পোস্টারসিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ হলেও এখন পর্যন্ত পোস্টার অপসারণের কাজ শেষ হয়নি। প্রার্থীদের লাগানো লেমিনেটেড পোস্টারে ভরে আছে নগরীর অলিগলি। নিজ উদ্যোগে পোস্টার অপসারণের কথা থাকলেও নির্বাচনের পর অনেকেই তা করেননি। তবে, এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। অপসারণের কাজ চললেও এসব পোস্টার কোন প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করা হবে, সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।

নির্বাচনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরসহ মোট ৭৪৯ প্রার্থী অংশ নেন। এসব প্রার্থীর  অধিকাংশই লেমিনেটেড পোস্টার লাগিয়েছিলেন। এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের নির্বাচনি পোস্টার থেকে প্রায় ২ হাজার ৫০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হবে, যা পরিবেশের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর।

নির্বাচনের পোস্টার এখনও অলি-গলি, পাড়া-মহল্লায় শোভা পাচ্ছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এসব পোস্টার দ্রুত অপসারণ না করলে নগরীর ড্রেন ও ম্যানহোলে গিয়ে জমাট বাঁধার আশঙ্কা রয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

রাস্তায় ফেলে রাখা পোস্টারপরিবেশ আইন অনুযায়ী, পলিথিন উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি। পৃথিবীর কোনও দেশে নির্বাচনি প্রচারে পলিথিনের এমন ব্যবহার দেখা যায় না। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে কোনও ভূমিকাও দেখা যায়নি ভ্রাম্যমাণ আদালত বা পরিবেশ অধিদফতরের।

নির্বাচনের আগে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা দূষণমুক্ত পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পোস্টার অপসারণ করতে দেখা যায়নি। এ অবস্থায় মাঠে নেমেছে দুই সিটি করপোরেশন।

রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে গ্রিন রোডের নিজ কার্যালয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমি সব নির্বাচিত কাউন্সিলর ও নেতাকর্মীদের অনুরোধ করবো ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন আগামীকালের (সোমবার) মধ্যে যেন অপসারণ করা হয়। আমরা চাই একটি পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন নগর। আমরা যে গুরু দায়িত্ব পেয়েছি, সেই দায়িত্ব পালনে আমরা সচেষ্ট থাকবো।’

রাস্তায় ফেলে রাখা পোস্টারতবে এই প্লাস্টিক কীভাবে ধ্বংস করা হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে প্লাস্টিক সামগ্রী ধ্বংসের তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। আমরা দায়িত্বভার নেওয়ার পর এই প্লাস্টিক সামগ্রী যাতে দৈনিক ধ্বংস করা যায় সে বিষয়ে আধুনিক প্রযুক্তি আনার উদ্যোগ নেবো।’

উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব পোস্টার লাগানো হয়েছে সেগুলো দ্রুত অপসারণের জন্য আমাদের নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের অনুরোধ করেছি। এখানে সিটি করপোরেশনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে।’

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বড় দলগুলোর প্রার্থীদের কেউই নির্বাচনি পোস্টার অপসারণ না করলেও ছোট দলগুলোর কাউকে ব্যতিক্রম দেখা গেছে। রবিবার সিপিবির কর্মীরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এসব পোস্টার অপসারণ করেছেন। বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম তার ফেসবুক পোস্টে একথা জানিয়েছেন।

ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পোস্টারএ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এস এম শফিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে পোস্টার ও নির্বাচনি প্রচার সামগ্রী অপসারণ শুরু করে দিয়েছি। রবিবার উত্তরা এলাকায় অভিযান ছিল। পর্যায়ক্রমে সব এলাকায় এ অভিযান চলবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন সংস্থাকে দিয়ে পলিথিন রিসাইক্লিন করছি। এরপর আমাদের ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাওয়া হবে।’

দক্ষিণ সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘পোস্টার সরানোর জন্য প্রার্থীরা তো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কেউ তা রক্ষা করেননি। তাই আমরা রবিবার সকাল থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছি। সকালে মন্ত্রীপাড়া থেকে শুরু করে প্রেস ক্লাব, কাকরাইল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুরান ঢাকা, নতুন ঢাকাসহ সবখানেই আমাদের কর্মীরা মাঠে নেমেছে। আশা করি আগামী তিন দিনের মধ্যে আমরা পুরো ঢাকা পরিষ্কার করতে পারবো। অপসারিত পোস্টার মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল নিয়ে যাবে।’

ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পোস্টারএর আগে ২২ জানুয়ারি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন করে লেমিনেটেড পোস্টার উৎপাদন ও প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দেন। রুলে সারাদেশে নির্বাচন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে লেমিনেটেড পোস্টার ছাপানো এবং প্রদর্শন বন্ধে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। নির্বাচনের পর এসব পোস্টার অপসারণ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।