অন্যদিকে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা নিয়মিতভাবে নজরদারি করছেন। অতিরিক্ত দামের অভিযোগ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) এবং শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় আগতদের অনেকেই খাবারের স্টলে যাচ্ছেন। আর সেই সুযোগে খাবারের দোকানদাররা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে খাবার বিক্রি করছেন। বেশিরভাগ স্টলেই টাঙানো নেই বাংলা একাডেমি নির্ধারিত খাবারের তালিকা।
এ বিষয়ে বাংলা একাডেমি থেকে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হলেও দোকানিরা বলছেন, ‘খাদ্যতালিকা তো আমাদের কাছে আছে, আবার টাঙাতে হবে কেন।’
অন্যদিকে খাদ্যের দাম কম-বেশি করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে একাডেমির পক্ষ থেকে মনিটরিংও করার কথা শোনা গেছে। তারপরেও থেমে নেই বেশি দামে খাবার বিক্রি।
মেলায় আগতদের সঙ্গে এবং দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেলার মাঠে লুচি এবং চিকেন চাপ চাহিদার শীর্ষে। চাহিদার শীর্ষে থাকলেও বাংলা একাডেমির খাদ্যতালিকায় এ দুটি পণ্যের দাম নির্ধারণ নেই।
এ বিষয়ে বাংলা একাডেমি বলছে নতুন আইটেম যোগ করলে তাদেরকে জানাতে হবে, তবে এ বিষয়ে দোকানিরা তাদেরকে জানায়নি। আর দোকানিরা বলছেন, চিকেন চাপের দাম ১৫০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। তারপরও বিভিন্ন সময় ১৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতেও দেখা গেছে।
তবে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে চিকেন চাপের দাম ১২০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
মেলায় এসে বন্ধুদের সঙ্গে ফুডকোর্টে লুচি এবং চিকেন চাপ খাওয়ার সময় কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাজমুল বাপ্পির সঙ্গে।
বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, এখানে চিকেন চাপ ১৮০ টাকা এবং লুচি ১৫ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। তবে চিকেন চাপের মান ভালো নয়। মনে হচ্ছে আরও এক-দুদিন আগের। তবে বিক্রেতা সেটি কোনোভাবেই মানতে রাজি না।
একটি আইটি ফার্মের পরিচালক পারভেজ মাহবুব খাবারের দাম না জেনে সপরিবারে খাবার খেতে বসে যান ক্যাফে হাজীর বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব হাউসে। তার মাধ্যমে দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা জানান বিফ তেহারি ১৬০ টাকা প্লেট। কিন্তু বাংলা একাডেমির নির্ধারিত খাবার মূল্যে এর দাম রয়েছে ১২০ টাকা।
একই দোকানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফাহিম ফখরুল বন্ধুদের সঙ্গে হালিম খাচ্ছিলেন। তাদের হালিমের দাম দোকানি জানিয়েছেন ৮০ টাকা। তবে একাডেমির তালিকায় এর দাম ৭০ টাকা।
দোকানে কেন মূল্য তালিকা টানানো নেই এবং দাম বেশি রাখা হচ্ছে জানতে চাইলে দোকানটির পরিচালক মো. শাহজাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মূল্যতালিকা আছে। তবে সেটি এখনো টানানো হয়নি, আজকেই টানিয়ে দেবো। খাবারের বেশি দাম রাখার বিষয়ে বলেন, ‘অনেক টাকা খরচ করে স্টল নিতে হয়েছে। ২০/৩০ টাকা বেশি লাভ না করতে পারলে তো পোষাবে না।’
নারায়ণগঞ্জের এক স্কুলের শিক্ষক জাকির হোসেন কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে বই মেলায় ঘুরতে এসে মানিকগঞ্জ পিঠা ঘরে বসেছিলেন ফুচকা খেতে। সেখানে প্রতি প্লেট ফুচকার দাম রাখা হচ্ছে ৭০ টাকা। তবে নির্ধারিত মূল্য তালিকায় এর দাম ধরা হয়েছে ৪০ টাকা।
এমন ঘটনা একটি-দুটি নয়, প্রায় সব দোকান বা ফুড স্টলের একই চিত্র। যারা জানেন না বাংলা একাডেমি খাদ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, তাদের কাছ থেকে যে যেভাবে পারছে দাম নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকের স্টলে মূল্য তালিকা টানানো না থাকায় ক্রেতারাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। মাঝে মধ্যে একাডেমির কড়াকড়িতে নির্ধারিত মূল্যে খাবার বিক্রি করেন দোকানিরা। তবে অভিযান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগের চিত্র দেখা যায়, নেওয়া হয় বাড়তি দাম।
পুরো বিষয়টি জানানো হয় বাংলা একাডেমির পরিচালক এবং বইমেলার ফুডকোর্টের দায়িত্বে থাকা হাসান কবিরকে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের টিমের লোক প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে মৌখিক এবং লিখিতভাবে বহুবার অনুরোধ করেছে। সেগুলো না মানায় আমি অভিযানও চালিয়েছি। সার্বক্ষণিক তো তাদের পেছনে লেগে থাকা সম্ভব না। তবে তারা একাডেমির নীতিমালা ভঙ্গ করছে। যদি একান্তই ব্যর্থ হই দোষীদের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে।