২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা ৩২ মিনিটে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ে ওয়াহেদ ম্যানশনে ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। মুহূর্তে ভবনটিতে আগুন ধরে যায় ও কিছুক্ষণের মধ্যেই আশপাশের পাঁচটি ভবনে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় নারী ও শিশুসহ মোট ৭১ জন প্রাণ হারায়। এদের মধ্যে ছিল জরিনার দুই ভাই অপু ও মোহাম্মদ আলী এবং ভাতিজা আরাফাত। চকবাজারে ফুলের দোকান বন্ধ করে চুড়িহাট্টা হয়ে বাসায় ফেরার পথে ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান তারা।
ঘটনার এক বছর পর স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে চুড়িহাট্টা মোড়ের ওয়াহিদ ম্যানশনের সামনে এসেছিলেন জরিনা। হাতে দুই ভাই ও ভাতিজার ছবি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, আর চোখে ছিল তার স্বজন হারানোর জল।
নিহত মোহাম্মদ আলীর বোন জরিনা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লাশ শনাক্তের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) মর্গ থেকে তিনটি মরদেহ হস্তান্তরের সময় জেলা প্রশাসন থেকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। এছাড়া এই এক বছরে সরকারের কেউই কোনও সহযোগিতা করেন নাই, খোঁজও নেন নাই। আমরাতো বাংলাদেশের নাগরিক, তাইলে সরকারের লোকজনের উচিত ছিল খোঁজ নেওয়া। কিন্তু কেউ একবারের জন্যও জিগায় নাই।’
দোষীরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে জরিনা বলেন, ‘এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটছে, কোনও কিছু থাইমা আছে? সবই চলতাছে। এক বছর গেছে গা, আর কয়দিন বাদে এইটা ধামাচাপা পড়বো। পুলিশ কাউরেই ধরে নাই। ভবনের মালিকরা এহন জামিনে ঘুইরা বেড়াইতাছে। যাগো লিগা এরকম একটা দুর্ঘটনা ঘটলো, তাগো কঠিন বিচার হোক, এইটাই চাওয়া।’
জুম্মন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আগুনের ঘটনায় তার মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। নিহত জুম্মনের ছেল আসিফ বলেন, ‘আগুনের ঘটনায় আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে। এখন আমরা ভালো নেই। আমরা পাঁচ ভাই। আমি একটি দোকানে চাকরি করি। ছোট ভাই মাস্টার্স পাস করলেও চাকরি পায়নি। এদিকে আসামিরা জামিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের বিচারে ধীরগতি হয়ে গেছে। তবে সরকারের কোনও দফতর আমাদের খোঁজ রাখেনি, সহযোগিতাও পাইনি।’
তিনি বলেন, আগুনের ঘটনার পর এক সপ্তাহ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে অনেকেই এসেছেন। অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু কিছুই করেনি। নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত কোনও পরিবারের খবর তারা রাখেনি।
অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পালনে বাবার ছবি নিয়ে চুড়িহাট্টা মোড়ে এসেছিলেন সুমন। সঙ্গে ছিল তার চাচাতো ভাই আসলাম হাওলাদার। আসলাম হাওলাদার বলেন, আগুনের ঘটনার দিন আমি চুড়িহাট্টা মোড়ে ছিলাম। ঠেলায় মালামাল নিয়ে যাচ্ছিলাম। যখন আগুন লাগে, তখন অনেক মানুষ দৌড়ায়, আমি পড়ে যাই। আর আমাকে পাড়িয়ে চলে যায় অনেক মানুষ। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও অসুস্থ হয়ে পড়ি, এখন আর কাজ করতে পারি না।
তিনি অভিযোগ করেন, আগুনে আমার দুটো ঠেলাগাড়ি পুড়েছিল। পরে সিটি করপোরেশন সেগুলো নিয়ে গেছে। অনেক মিনতি করে চেয়েছিলাম, তবে তারা দেয় নাই, কোনও সহযোগিতাও পাইনি। এখন অন্য মানুষের সঙ্গে লেবারি করে কষ্টে দিন কাটছে।