বিদেশ ফেরত যাত্রীর গোপনীয়তা লঙ্ঘন অপেশাদার ও নৈতিকতাবিরোধী: আইইডিসিআর

আইইডিসিআর

বিদেশ ফেরত যাত্রীকে কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) সংক্রমণ সন্দেহ করে তার গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা অপরাধ বলে জানিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এ ধরনের অপেশাদার আচরণ শুধু নৈতিকতা বিরোধীই নয়, সংবেদনশীল সরকারি তথ্যের গোপনীয়তা লংঘনও সরকারি চাকরিবিধির লঙ্ঘন। কোনও ব্যক্তি কোভিড-১৯ সংক্রমিত কিনা তা নিশ্চিত করা ও প্রকাশ করার সরকার নির্ধারিত একমাত্র প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর। বিষয়টি আমরা আবারও সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছি।

আজ বৃহস্পতিবার ( ২০ ফেব্রুয়ারি)  আইইডিসিআর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানে পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, উদ্বেগের সঙ্গে অবহিত হয়েছি যে কোনও এক স্থলবন্দরে দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা (স্বাস্থ্য বিভাগ নয়) বিদেশ থেকে আসা এক যাত্রীকে কোভিড-১৯ সংক্রমিত সন্দেহ করে তার ব্যক্তিগত পরিচয় ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের অপেশাদার আচরণ শুধু নৈতিকতাবিরোধীই নয়, সংবেদনশীল সরকারিতথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘনসংক্রান্ত সরকারি চাকরিবিধির লঙ্ঘন। কোনও ব্যক্তি কোভিড-১৯ সংক্রমিত কিনা তা নিশ্চিত করার ও প্রকাশ করার সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইইডিসিআর।

উল্লেখ্য, সীমান্ত বন্দরগুলোসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ফল তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করে প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করে আসছে আইইডিসিআর। তবে দেশে এখনও এ রোগে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তিকে পায়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ শনাক্তের জন্য সকল পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা তথা সর্বস্তরের জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, ভুল পদ্ধতিতে সহযোগিতা করতে গেলে তা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াকেই বিপন্ন করবে। কোভিড-১৯ সন্দেহভাজন ব্যক্তি নিজের ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার ভয়ে তার তথ্য ও অবস্থান গোপন করতে পারেন। এ ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়াতে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধৈর্যশীল ও পেশাগত দক্ষতা ও আন্তরিকতা দিয়ে নিজ দায়িত্ব পালন ও যে কোন প্রশ্ন আইইডিসিআরের কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ কিংবা স্থানীয় সিভিল সার্জন বা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা-র কাছ থেকে জেনে নিতে অনুরোধ করেছে আইইডিসিআর।

এদিকে, আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সকালে কোভিড-১৯ নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আজ তারা চীন সরকারের কাছ থেকে কোভিড-১৯ শনাক্ত করার জন্য ৫০০ পিসিআর কিট পেয়েছেন।

তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত রোগীর সংখ্যা ৭৫ হাজার ২০৪ জন, এর মধ্যে চীনেই রয়েছেন ৭৪ হাজার ২৮০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৭২জন। মোট মারা গেছেন দুই হাজার ছয় জন। তবে রোগী সংখ্যা দেখে দেশে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, রোগীর সংখ্যা দেখে বাংলাদেশে কেউ যেন আতঙ্কিত না হই।

সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত পাঁচ বাংলাদেশি সম্পর্কে তিনি জানান, পাঁচ জনের অবস্থাই অপরিবর্তিত, এর মধ্যে একজন আছেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সিঙ্গাপুরে নিশ্চিত রোগীর সংখ্যা ৮৪ জন, এক হাজার ৭৮ জনের পরীক্ষাতে নেগেটিভ এসেছে, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৪ জন। অনেকেই সুস্থ হয়ে ফিরছেন, তাই করোনা নিয়ে যেন অযথা আতঙ্কের মধ্যে না পড়ি।

তিনি জানান, আইইডিসিআরের হটলাইনে এখন পর্যন্ত কল এসেছে ৬৬টি, এর মধ্যে ৫১টি কল এসেছে কোভিড-১৯ নিয়ে। আইইডিসিআর ইতোমধ্যেই ৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছে, কিন্তু তার মধ্যে কারও শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এই ৭৫ জনের মধ্যে চার জন চীনের নাগরিক, বাকিরা বাংলাদেশি।

অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, উহান থেকে যারা এসেছিলেন, তারা আশকোনা হজ ক্যাম্পে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে বাড়ি ফিরে গেলেও তাদের দিকে আরও ১০ দিনের বিশেষ নজরে রয়েছে আমাদের। তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তারা সবাই সুস্থ আছেন, তাদের মধ্যে কোভিড-১৯ এর কোনও লক্ষণ-উপসর্গ নেই বলেও জানান অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা। সংবাদ সম্মেলনে এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।

এ সংবাদ সম্মেলনে মাস্ক পরার সঠিক ব্যবহারবিধি নিয়ে সবাইকে অবহিত করেন ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন খান।