‘ভাষা থেকে দেশ, সবই অর্জন রক্তের বিনিময়ে’

বইমেলায় দুই শিশু২১ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বেলা পৌনে ১১টায়ও জমে ওঠেনি বইমেলা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যারা ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন, তারাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসেন বইমেলাতে। দল বেঁধে এসেছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। কেউ বই কিনছেন, কেউবা দেখছেন।

ছেলে রোয়াইশিদ রাইয়ান ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহাকে নিয়ে বইমেলার পথে হাঁটছিলেন বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ শাহীন। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারির মহিমা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। আমাদের সন্তানদের এটা জানাতে হবে। ব্যস্ততা যতই থাকুক, চেষ্টা করি প্রতি বইমেলাতেই সন্তানদের নিয়ে আসতে। শহীদ মিনারে নিয়ে আসতে। কারণ, ওদের তো জানতে হবে, এই ভাষা এমনি এমনি আসেনি, কত যুদ্ধ করে, কত রক্তের বিনিময়ে ভাষাকে আমরা পেয়েছি।’
দুই মেয়েকে নিয়ে বইমেলায় বাবা‘নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানতে হবে, আমাদের শেকড় জানতে হবে। ওদেরকে জানতে হবে ভাষা থেকে স্বাধীনতা, কোনও কিছুই এমনি এমনি আসেনি। সব কিছু যুদ্ধ করে আনা।’- যোগ করেন মোহাম্মদ শাহীন
আয়াত খান সাদকে নিয়ে লালবাগ থেকে কাকডাকা ভোরে শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসেন দাদি ফাতেমা খানম। শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার পর ঘুরেছেন বইমেলাতেও। পরে যান শাহবাগে। তিনি বলেন,‘ঢাকা শহরে ঘোরার মতো পরিবেশ পাই না। শহরটা একটা জেলখানার মতো হয়ে গেছে। তবে এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলোতে আসি। একুশে ফেব্রুয়ারি ও বইমেলা সম্পর্কে জানানো যায় বাচ্চাদের।’
শিশু সন্তানকে নিয়ে বইয়ের স্টলে এক মা সরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ আবু হাসান বই মেলায় এসেছেন স্ত্রী, দুই মেয়ে ও ভাগ্নে-ভাগ্নিকে নিয়ে। প্রতি বছরই আসেন জানিয়ে আবু হাসান বলেন, ‘বইমেলা এখন জাতীয় জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে। অন্তত প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এখানে আসার চেষ্টা করি। বিশেষ দিনে চেষ্টা করি পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসতে। বাচ্চাদের নিয়ে আসি। কারণ, ওরা যেন আমাদের সংস্কৃতি, দেশ, ঐতিহ্য সর্ম্পকে জানতে পারে—শিখতে পারে।’
মেলা থেকে কেনা বই হাতে দুই শিশুআবু হাসানের স্ত্রী দিলারা আলো চন্দনা বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের সন্তানরা পৃথিবী সর্ম্পকে জানুক। তবে সবার আগে জানুক দেশ সম্পর্কে।’
সৈয়দ ওয়াসেকুল ইসলাম ইভান এসেছে বাবা মায়ের সঙ্গে। মাদ্রাসাতে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া ইভান বলে, ‘সকালে এসেছি মেলাতে, এখনও ঘুরছি। পরে একসঙ্গে বই কিনবো।’
মেলায় বই হাতে দুই শিশুন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোতাহারা সামিহা এসেছেন বাবা আর বোনের সঙ্গে। সে বলে,‘দুই বছর বয়স থেকেই আমি মেলায় আসি। নতুন নতুন বই ঘুরে দেখতে ভালো লাগে। নতুন বইয়ের গন্ধ নিতে ভালো লাগে। এবারও প্রথম দিনসহ আরও কয়েকদিন এসেছি। আসলে ব্যাগ ভর্তি বই নিয়ে যায়। আজ কেনা প্রথম বইটার নাম গণিতের জাদু।’
অংক বই কেন কিনেছে জানতে চাইলে বাবার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে সামিহা বলে, ‘অংক আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। অংক কঠিন হলেও আমার মজা লাগে।’ তার প্রিয় লেখকদের তালিকায় রয়েছেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।
বইমেলায় ছবি হাতে এক শিশুসামিহা আর মালিহার বাবা বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘পুরো পরিবার নিয়ে প্রতি বছরই আসি। আসা না পর্যন্ত মনে হয় ফাঁকা লাগছে। বই কিনতে ভালো লাগে।’ বই মেলায় আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেলা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তাছাড়া ভাষার জন্য আমাদের যে সংগ্রামটা, যে অর্জন; মেয়েদের মধ্যেও সেই বোধের বীজটা বপন করে দিতে চাই। আমরা ওদের না জানালে ওরাও পরের প্রজেন্মকে জানাতে পারবে না। তাই মেলায় আসি।’
বইমেলাতে শিশুদের জন্য আরেক আকর্ষণ শিশু চত্বর। এখানে আলাদা করে রয়েছে খেলার জায়গা আর সিসিমপুর মঞ্চ। ছুটির দিনগুলোতে এই চত্বর মুখরিত থাকে শিশুদের কোলাহলে। এখানে শিশুদের জন্য ৩৯টি স্টল রয়েছে। শিশুদের বইয়ের পাশাপাশি এখানে রয়েছে,ছবি আঁকার সরঞ্জাম ও শিক্ষার নানা উপকরণ।