২০১৯ সালে রাজধানীর মিরপুর ও ধানমন্ডি এলাকার বেশ কয়েকটি বাগান ছাদ থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি না পেলেও শঙ্কা থেকেই তিল তিল করে গড়ে তোলা বাগান নিজ হাতেই ভেঙে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। এবার ছাদবাগান সরিয়ে নিতে অ্যাপার্টমেন্ট কমিটির নোটিশ কার্যকর করতে বাধ্য হচ্ছেন বাম রাজনৈতিক নেতা বৃত্বা রায় দীপা।
অ্যাপার্টমেন্ট কমিটি বলছে, ছাদের মালিকানা ২৪ জনের। তাকে শর্তসাপেক্ষে বাগান করতে দেওয়া হয়েছিল। এখন গাছ কেটে ফেলতে নয়, তাকে বিকল্প জায়গায় সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
আদাবরের অ্যাপার্টমেন্টটির একটি ফ্ল্যাটের মালিক বৃত্বা রায় দীপা। তিনি ছাদবাগানটি বানানোর আগে কমিটির অনুমতি নিয়েছিলেন। এখন কমিটি তাকে জানিয়েছে, এই বাগান সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ হিসেবে তারা মৌখিকভাবে নানা অভিযোগ করেছেন। যার মধ্যে একটি হলো, ছাদের বেশিরভাগ অংশ দখল করে বাগান করা।
এ বিষয়ে বৃত্বা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুরুতেই অনুমতি নেওয়ার সময় আমাকে ফলের গাছ লাগাতে নিষেধ করা হয়। বাগানটির পরিসর যখন বেড়েছে তখন আমি ফলের এক-দুইটা ছোট গাছ লাগাইনি তা নয়। কিন্তু প্রতিহিংসাপরায়ণতার কারণটাই আমি বুঝতে পারছি না। বাগান আমি করছি, অন্য ফ্ল্যাটের সবাই সেটা ব্যবহার করতে পারেন, তাদের আত্মীয়দের নিয়ে বাগানে ঘোরেন, তাহলে সমস্যা কোথায়। তারা কোনও কথাই শুনতে চাইলো না।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি সবাই মিলে বাগানটি করি। তারা তাতে রাজি হয়নি। বাগান উন্মুক্ত। যে যখন খুশি যেতে পারে। আমাকে জানিয়ে ফল-ফুলও নিতে পারে। সবার পক্ষ থেকে বাগান আমি পরিচর্যা করি, সেটাও মানতে নারাজ তারা। শুধু ফুল রাখবো তাতেও নারাজ।’
বাগান ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কেউ আছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গত বছর দুয়েক ডেঙ্গুর ভয় দেখিয়ে বাগান সরাতে বলার প্রবণতা দেখা গেছে। কিন্তু আমরা যারা বাগান করি তারা নিয়ম মেনেই করি। ছাদ যাতে নষ্ট না হয়, কারোর সমস্যা না হয়, হাঁটার জায়গা যেন থাকে, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জায়গা যেন থাকে, এসব মেনেই করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আবার যখন পানির কোনও গাছ লাগাবে তখন অবশ্যই সেখানে যেন মশা না হয় সেই উপযোগী মাছ ছাড়তে হবে। গতবছর কয়েকটি অভিযানে বাসাবাড়িতে গিয়ে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া গেছে বলা হয়েছে। কখনও কখনও কারও কারও অবহেলায় অন্য বাগানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
আইন তৈরির কথা কখনও তোলা হয়নি উল্লেখ করে এই সংগঠক বলেন, এধরনের পরিস্থিতি এড়াতে এবং ছাদবাগানিদের সুরক্ষা দিতে একটা নিয়মতো হওয়াই দরকার।
একেকটা গাছ একেকটা সন্তানের মতো মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাকে অন্য কোথাও ফেলে আসা কী করে সম্ভব?
মানুষ হিংস্র আচরণ করে কীভাবে প্রশ্ন তুলে তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই এখন জানি কেন ছাদবাগান দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে এটা উৎসাহিত করা হচ্ছে। আমার রাস্তায় গাছের জায়গা নেই, আমার ছাদটাই সবুজের ভরসা। আমি নিজে বৃত্বা রায়ের ছাদে গিয়েছি। এমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছাদ কম দেখা যায়। আমি কমিটির লোকদের সঙ্গে কথা বলে ব্যর্থ হয়েছি। ওই বাগানে অ্যাপার্টমেন্টের সবাই ঘুরবেন, ছবি তুলবেন, কিন্তু বাগানটাকে বাঁচাবেন না, নিজেরাও করবেন না।
ছাদবাগান কি কেউ তাহলে করবে না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা কমন স্পেস। সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তারপরও প্রথমে শর্তসাপেক্ষে কয়েকটা গাছ লাগাতে দেওয়া হয়েছিল। উনি পরে সেটার পরিসর বাড়িয়েছেন। আমরা নোটিশ দেওয়ার পর বারবারই উনি সরিয়ে নেবেন বললেও নেননি। এই অ্যাপার্টমেন্টে ২৪ জন মালিক, তাদের ২৪ রকমের মতামত। কেউ বলে গাছের কারণে সমস্যা, কেউ বলে শিশুদের খেলার জায়গা নেই, কেউ বলে আমাদের মিটিং রুম নেই।’
তাহলে আপনারা এখানে মিটিং রুম তুলতে চান কিনা প্রশ্নের জবাবে মফিজুল আলম বলেন, ‘অফিস করবো, রুম তোলা হবে।’