সান্ধ্যকোর্সের বিপক্ষে বলায় একাংশের ‘তোপের মুখে’ শিক্ষক নেতা মাকসুদ কামাল

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এএসএম মাকসুদ কামাল গাড়িতে ওঠার সময় তাকে ঘিরে ধরেন সান্ধ্যকোর্সের পক্ষের শিক্ষকরা।

সান্ধ্যকোর্সে ৫ সপ্তাহের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে, বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষকরা কোর্সটি চালু রাখার পক্ষে। এর জন্য উঠে-পড়ে লেগেছেন তারা। এর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় শিক্ষক নেতা অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল তাদের তোপের মুখে পড়েন। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) অ্যাকাডেমিক সভা শেষে রাত ১১টার দিকে উপাচার্যের অফিসের গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, সভায় দুই শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। এরমধ্যে সান্ধ্যকোর্সের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত উপস্থাপন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ জন শিক্ষক। মত প্রকাশকারীদের মধ্যে সান্ধ্যকোর্সের পক্ষে অবস্থানকারীদের বেশিরভাগই ছিলেন বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষক।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে ৫ সপ্তাহের জন্য সান্ধ্যকোর্সে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এছাড়া সান্ধ্যকোর্স যুগোপযোগী করতে ১৮ সদস্যের একটি নতুন কমিটি গঠন করেছেন উপাচার্য। কমিটিকে আগামী ৫ সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সভা শেষে উপাচার্য তার লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান তুলে ধরেন। সেখানে শিক্ষক সমিতির সভাপতি এএসএম মাকসুদ কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিং শেষে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল যখন বাসায় যাওয়ার জন্য উপাচার্যের অফিস কক্ষের গেটের সামন থেকে গাড়িতে উঠে বসেন, সে সময় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল মঈন তাকে ব্যক্তিগত বিষয়ে খোঁচা দিয়ে কথা বলেন। সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাপক কামাল গাড়ি থেকে নেমে যান। এসময় অধ্যাপক মঈনের পাশে থাকা ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের প্রায় ১৫-২০ জন শিক্ষক মাকসুদ কামালকে ঘিরে ফেলেন। এ সময় তারা উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আপনি আমাদের নেতা। কিন্তু আজ আমাদের পক্ষে আপনার কোনও অবস্থান ছিল না কেন? আপনি এখনই আমাদের সঙ্গে উপাচার্যের কাছে গিয়ে সান্ধ্যকোর্সের বিষয়ে কথা বলবেন। তখন মাকসুদ কামাল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে যা করার তাই উপাচার্য করবেন। আপনাদের অভিভাবক হলেন উপাচার্য।’

তখন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের আহ্বায়ক আ ক ম জামাল উদ্দিন উত্তেজিত হয়ে মাকসুদ কামালকে বলেন, ‘আপনারা সান্ধ্যকোর্সের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এখন যদি ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষকরা আগামীকাল থেকে স্ট্রাইকে যায়, তখন বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল হয়ে গেলে কি করবেন? আপনারা নীলনকশা এঁকেছেন। আপনার শিক্ষক সমিতির পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত।’

অধ্যাপক মাকসুদ কামালকে ঘিরে ফেলার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করতে গেলে এই প্রতিবেদকের হাত থেকে ওই শিক্ষকরা ধমক দিয়ে মোবাইল কেড়ে নিতে ধস্তাধস্তি করেন। পরে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন অধ্যাপক প্রতিবেদককে এক পাশে সরিয়ে নিয়ে যান।

তবে, ঘটনার বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল কোনও অভিযোগ করেননি। জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সে হিসেবে শিক্ষকদের একটি অংশ তাদের অভিযোগ এবং দাবি আমার কাছে উত্থাপন করেছে। তারা একটু উত্তেজিত ছিল। শিক্ষক নেতা হিসেবে আমার কাছে তারা কথা বলতেই পারেন, এটাই হলো স্বাভাবিক। আমি শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল, তাদের কথাগুলো শুনি এবং সব সময় সত্যের পক্ষে অবস্থান করি।’

অপর শিক্ষকদের সঙ্গে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কথা বলা সম্ভব হয়নি।