সাংবাদিক আরিফকে গভীর রাতে তুলে নেওয়ার ঘটনায় ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

আরিফুল ইসলাম

মধ্যরাতে মাদকবিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযানের নামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে ঘরের দরজা ভেঙে তুলে নিয়ে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে সাজার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে ফেসবুকে। কেন গভীর রাতে সাংবাদিকদের দরজা ভেঙে তাকে মারধর করতে করতে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো সে প্রশ্নের পাশাপাশি পুরো ঘটনাকে শুধু সংবাদ মাধ্যমের ওপর হুমকি নয়, মানবাধিকারের ওপর চ্যালেঞ্জ বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। গণমাধ্যমকর্মী, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, উন্নয়নকর্মী গবেষক সবধরনের পেশার মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন আরিফের প্রতি ঘটে যাওয়া হয়রানি কেন বন্ধ হবে না।

সময় টেলিভিশনের বার্তা প্রধান তুষার আব্দুল্লাহর ফেসবুক পেজে মন্তব্য

সময় টেলিভিশনের বার্তা প্রধান তুষার আব্দুল্লাহ লিখেছেন, ‘আমলাতন্ত্রের গণতন্ত্র নিয়ে বরাবরই অস্বস্তি । গণমাধ্যম গণতন্ত্রের স্তম্ভ, তাকে তো তারা প্রতিপক্ষ ভাববেনই ।’

মধ্যরাতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে সাংবাদিককে ধরে নিয়ে যাওয়াকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই উল্লেখ করে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক লিখেছেন, ‘এটি বড় ধরনের এক অশনি সংকেত। এটি শুধু সংবাদ মাধ্যমের ওপর হুমকি নয়, এই হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মানবাধিকারের ওপরও। এই গ্রেফতার ও জেলদানের ঘটনায় ঢাকায় সাংবাদিক সমাজের কোনও কর্মসূচি এখনও আমার নজরে পড়েনি। এর তাৎক্ষণিক শক্ত প্রতিবাদ হওয়া দরকার ছিল। বড় বড় সাংবাদিক নেতাদের উচিত রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করা।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘মফস্বলে সাংবাদিকতা এমনিতেই ঝুঁকির মুখে। প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে মফস্বল সাংবাদিকদেরকে একটা আইডি কার্ড দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়, তারা চরে খায়। বাস্তবতা হচ্ছে ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদেরকে ন্যূনতম বেঁচে থাকার মতো সম্মানি দেওয়া হয় না, এরা অনেকটাই 'নো ওয়ার্ক নো পে' জাতীয় শ্রমিকের সিস্টেমে কাজ করেন। তার মধ্যে থেকেও গোটা দেশের সব অন্যায় অবিচার বন্ধ করতে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। মফস্বলে অনেক মেধাবী ও নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক আছেন যারা সকল কিছু তুচ্ছ করে আমাদের জন্য ৬ হাজার টাকার বালিশ কিংবা ডিসির নিজের নামে সরকারি পুকুরের নামকরণের খবর প্রচার করেন। এদের কোনও রক্ষাকবচ নেই। এরা মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী চেনেন না, গণভবনে ইফতারির দাওয়াত খেয়ে সেলফি খিঁচার সৌভাগ্য এদের নেই, পূর্বাচলে সংরক্ষিত কোটায় প্লট পাওয়া কিংবা ঢাকা ক্লাবে সম্মানজনক মেম্বারশিপ পাওয়া এদের কল্পনারও বাইরে। অথচ এরাই প্রকৃত বাংলাদেশ, ঢাকায় থাকা ঘাড়ে গর্দানে মোটা দালাল সাংবাদিকরা আসল বাংলাদেশ নয়। এদেরকে রক্ষা করতে আমাদের জনগণকে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। এরা না থাকলে আপনাদের নিরাপত্তার শেষ রক্ষাকবচও ছিঁড়ে যাবে। সাধু সাবধান।’

শরিফুল হাসানের ফেসবুক মন্তব্য

উন্নয়নকর্মী ও সাবেক সাংবাদিক শরিফুল হাসান তার ফেসবুক ওয়ালে মন্তব্য করেছেন, ‘এ তো দেখছি ভয়াবহ খবর! এতোদিন শুনতাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কেউ মানুষকে তুলে নিয়ে যায়, আর অন্যরা ৫৭ ধারা দেয়। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আপা তো দেখি এসবের ধার ধারেন না! তিনি তো দেখছি সাংবাদিককে তুলে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে বিচার বসিয়েছেন! অভিনন্দন আপনাকে! আপনারাই আসল রাষ্ট্র! সাংবাদিক জনগণ সবাই দুধভাত!’

নবনীতা চৌধুরীর মন্তব্য

ব্র্যাকের প্রিভেন্টিং ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন ইনিশিয়েটিভের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় ভয় এখন এটাই। কখন যে আপনি কাকে খেপিয়ে দেবেন, কার সাথে বেয়াদবি করে ফেলবেন, আর তিনি কোন অভিযোগে আপনাকে কাকে দিয়ে তুলিয়ে নেবেন বলা মুশকিল। এখানে যেমন সরকারি টাকায় করা এক পুকুরের নাম জেলা প্রশাসক নিজ নামে দিতে চাইলে কোথাকার কোন্ ‘মফস্বল সাংবাদিক’ আরিফুল তা নিয়ে নিউজ করে বাগড়া দিয়েছিল। রাতের বেলা তাই ২/৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট আনসার সদস্যদের নিয়ে গিয়ে দরজা ভেঙে আরিফুলকে তুলে এনেছে। বেশ হয়েছে! এমন না ঘটলে আনসার সদস্য আর ম্যাজিস্ট্রেট মিলেও যে মাঝরাতে সাংবাদিক তোলা যায় সেটাও তো জানতে পারতাম না! আর আরেক আলোকচিত্র সাংবাদিক কাজল কয়েকদিন আগে বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি। এসব খবর নিয়মিত সাংবাদিকদের সব সংবাদমাধ্যমেও আসে না। এসব খবর বেশি ছাপলেও সম্ভবত বেয়াদবি হয়।’

আরিফ রহমানের বিরুদ্ধে

অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ রহমান লিখেছেন, ‘চোখ বন্ধ করে একটা ভবিষ্যৎবাণী করে রাখি। এই ডিসি সুলতানা পারভীনের পক্ষে লাইন ধরে একদল বিসিএস ক্যাডার দাঁড়িয়ে যাবেন। তিনি কতবড় বেগম রোকেয়া ইত্যাদির বয়ান আসবে। আরিফুল কতবড় গাঁজার ব্যাপারি সেটার তথ্য বের হতে থাকবে। সচিবের জন্য আটকে রাখা ফেরির কারণে যখন এক কিশোর মারা গেলো তখনও কত বিসিএস ভাইয়ারা ... নেমে গেলেন (অবশ্যই সবাই নন), এখানে তো কেউ মারা যায় নাই।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা আমাদের যতসামান্য কষ্টার্জিত আয়ের থেকে কেটে রাখা ট্যাক্সের টাকা দিয়ে সুলতানা পারভীনদের পুষি। বড় থেকে বড় নিপীড়ক বানাই। তাদের শানে কেউ বেয়াদবি করলে ওনারা সরকারি বাহিনী ব্যবহার করে দরজা ভেঙে পেটাতে থাকেন নাগরিকদের। অথচ অভিযোগটা তো তেমন গুরুতর ছিল না। সামান্য একটা বিষয়। পুকুরের নামটা পাল্টে দিলেই হতো। ভুল স্বীকারও করা লাগতো না।

কিন্তু তাতে যে ব্রাহ্মণের জাত যাবে...’

 

আরও পড়ুন-

মধ্যরাতে আরিফকে গ্রেফতার করে সাজা: রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ

আরিফের ওপর অন্যায় হয়ে থাকলে ডিসিকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবেপ্রতিমন্ত্রী

‘রাতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকতে পারেন না মোবাইল কোর্ট’

মোবাইল কোর্টে আরিফকে সাজায় ক্ষুব্ধ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তদন্তের নির্দেশ

কুড়িগ্রামের ডিসির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে বললেন আইনমন্ত্রী

‘তুই অনেক জ্বালাচ্ছিস- বলে মারতে মারতে নিয়ে যায় আরিফকে’

মধ্যরাতে বাড়ি থেকে সাংবাদিককে ধরে নিয়ে মোবাইল কোর্টে এক বছরের জেল

মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফুলকে তুলে নিয়ে গেলো মোবাইল কোর্ট

কাবিখা’র টাকায় পুকুর সংস্কার করে ডিসি’র নামে নামকরণ!