করোনা সংক্রমণ: মাঠে থাকা পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা কতটুকু?

করোনা ঝুঁকিতে পুলিশ কতটা নিরাপদ (ছবি: ফোকাস বাংলা)করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছেন বিভিন্ন স্তরের পুলিশ সদস্যরা। বিভিন্ন হাসপাতাল ও কোয়ারেন্টিনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত তারা, দায়িত্ব পালন করছেন বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরের ইমিগ্রেশনেও। এ অবস্থায় প্রাণঘাতী এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে এসেছে।

তবে পুলিশ সদর দফতর বলছে, নিজেদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় স্বার্থে দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ। যারা মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (২১ মার্চ) সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার পুলিশ সদস্যদের কেউ কেউ মাস্ক পরে আছেন। তবে সেভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার বা গ্লাভস পরতে দেখা যায়নি। অবশ্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষের সামনেই হ্যান্ডশেক, কোলাকুলিকে নিরুৎসাহিত করে টানানো আছে ফেস্টুন।

ওসি আব্দুল লতিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশ সদর দফতর থেকে আমাদের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের জন্য হ্যান্ডওয়াশ ও সাবানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের এত মানুষের সঙ্গে মিশতে হয় যে স্বাভাবিকভাবে সংক্রমণ এড়ানো কঠিন। এরপরও যতটুকু সম্ভব নিরাপদে চলার জন্য থানার পুলিশ সদস্যদের বলেছি।’করোনা ঝুঁকির মধ্যে পুলিশ কতটা নিরাপদ

ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘সব পুলিশ সদস্যকে করোনায় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। নিয়মিত হাত ধুয়ে রাখা ও মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। থানাগুলোতে দৃশ্যমান স্থানে করোনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো উল্লেখ করা ফেস্টুন পাঠানো হয়েছে।’

দেশের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ সদস্যরা। এর কোনও কোনোটিতে রয়েছে নিজস্ব পুলিশ ক্যাম্প বা ফাঁড়ি। সেখানেই তারা থাকেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা হয় না। তবে বিভিন্ন অসুস্থতা নিয়ে মানুষ আসে। আমরা হাসপাতালের নিরাপত্তায় রয়েছি। করোনার প্রাদুর্ভাবের পর আমাদের হাসপাতাল থেকে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে।’

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনেও পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে তাদের গ্লাভস ও মাস্ক পরে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তবে এসব ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন অনেকেই। তারা বলছেন, ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের কাছ থেকে পুলিশ সদস্যদের দূরত্ব খুব কম থাকে। এছাড়া হাসপাতালে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদেরও ঝুঁকি রয়েছে। অপরদিকে, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের একটি অংশ দীর্ঘ সময় বাইরে থাকতে হয়। তাদের সুরক্ষার বিষয়টিও ভাবা দরকার।

পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সবাই যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সচেতন থেকে দায়িত্ব পালন করে। সদস্যদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সের পাশাপাশি আমাদের গ্রুপে মেসেজ যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক পাঠানো হয়েছে। তবে আমাদের আরও চাহিদা রয়েছে। এসব ইকুইপমেন্টের আরও প্রয়োজন রয়েছে।’ জাতীয় স্বার্থে তারা সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে নাগরিকদের পাশে আছেন এবং দায়িত্ব পালন করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দেশের পুলিশ লাইনগুলোতে ঢোকার ও বের হওয়ার গেট কমিয়ে আনা হচ্ছে উল্লেখ করে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঢোকার ও বের হওয়ার মুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান রাখা হয়েছে। প্রয়োজনের বাইরে কাউকে বের না হতে নিরুৎসাহী করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে নিজস্ব কোয়ারেন্টিন সুবিধা রয়েছে। কেউ অসুস্থ হলে সেখানে রাখা হবে।’