বিভিন্ন গবেষণা থেকে ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা আড়াই থেকে চার লাখ। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, পথে তাদের অবস্থান হওয়ায় এবং সংঘবদ্ধ চলাফেরা ও রাতযাপনের কারণে করোনাভাইরাসের বাহক হিসেবে খুব ঝুঁকির মধ্যে আছে তারা। তাদের থাকার জায়গা না থাকলেও এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের হার কম। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিশুরা এই ভাইরাসের বাহক হিসেবে ঝুঁকির মধ্যে আছে। পথশিশুরা কিন্তু দলবদ্ধভাবে বসবাস করে, ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে রাতের বেলা একসঙ্গে থাকে। পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবাইকে ঘরে নিরাপদে থাকতে বলছি, কিন্তু যাদের ঘরই নেই তারা কী করবে। সরকারের বিশাল বাজেটের পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রম আছে। আমরা মনে করি সেটাতে এই মুহূর্তে আলাদাভাবে জোর দিয়ে অন্তত মেগা সিটিগুলোতে যে শিশুরা আছে তাদের জন্য করোনায় বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন ও এনজিওগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত। এখন স্কুল-কলেজ বন্ধ, অস্থায়ীভাবে সেগুলোকে ব্যবহার করা যাচ্ছে না? এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা নির্বাচনের সময় ব্যবহার করছি, অন্যান্য কাজে ব্যবহার করছি। এলাকাভিত্তিক এটা করা সম্ভব। সক্ষমতার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী পাওয়া যাবে, অবকাঠামো পাওয়া যাবে। শুধু পরিকল্পনা দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারাদেশের কার্যক্রমের মধ্যেও প্রত্যেকটি সেন্টারে একটি করে আলাদা রুম কোয়ারেন্টিনের জন্য রেখেছি। কারণ বাইরে থেকে যে আসবে সে যদি কারও সঙ্গে মেশে, তাহলে সংক্রমণ হতে পারে। আমরা হয়তো সবাইকে পাঠাতে পারবো না, কিন্তু আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি পথশিশুদের ব্যাপারে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাইফ উল্লাহ মুন্সি বলেন, ‘শুধু শিশু না ছিন্নমূল সব মানুষই বাহক হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। কারণ তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান নেই বললেই চলে। পরিবেশগতভাবেই তারা নাজুক অবস্থায় আছে। এই দুটি কারণেই তারা ঝুঁকির মধ্যে আছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে শিশুদের মৃত্যু হয় কম, কিন্তু বাহক হিসেবে ভূমিকা রাখলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।’