করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশের কার্যক্রম সীমিত। খোলা নেই পাড়া-মহল্লার হোটেল রেস্তোরাঁ। এই হোটেল রেস্তোরাঁ থেকে আসা উচ্ছিষ্ট অবহেলিত এসব প্রাণীর মূল খাবার। খাবারের অভাবে অনেক জায়গায় তাদের হিংস্র আচরণের খবর পাওয়া গেছে। রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকে চারটি হরিণ খেয়ে ফেলেছে পাঁচটি ক্ষুধার্ত কুকুর। ঢাকায় কত কুকুর আছে তার সঠিক হিসাব নেই। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পুরনো হিসাব অনুযায়ী ঢাকায় এর সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি।
দীপান্বিতা রিদি বলেন, মানুষ মনে করে করোনা আক্রান্ত কিংবা তার প্রভাবে কুকুর হিংস্র হয়ে যাচ্ছে। আসলে তারা ক্ষুধার্ত, খাবারের জন্য তাদের এই অস্বাভাবিক আচরণ। এই যে খাবার কেড়ে নিতে চায় কিংবা অস্বাভাবিক আচরণ, এগুলো সবই কুকুরগুলো ক্ষুধার জন্য করে।
তিনি আরও বলেন, তারা যদি দিনের পর দিন না খেয়ে মারা যায়, তাহলে আবার এভাবেই রাস্তায় পড়ে থাকবে। তাতে তাদের শরীর পচে গিয়ে অন্য রোগ ছড়াতে পারে। এই ক্রাইসিসের সময় এখন পরিচ্ছন্নতাকর্মীও কিন্তু তেমন নেই। মানুষের জন্য চারদিক থেকে সাহায্য আসছে, কিন্তু এই প্রাণীগুলোর জন্য তেমন কেউ নেই। বিভিন্ন জায়গায় নিজ উদ্যোগে অনেকেই খাবার দিচ্ছেন কিন্তু তাও পর্যাপ্ত না, অন্তত ঢাকায় যে সংখ্যক কুকুর আছে। এ সময় তিনি আরও মানুষকে এসব বোবাপ্রাণীর খাবারের জোগাড়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কুকুরের প্রধান খাদ্য উচ্ছিষ্ট। করোনার কারণে সব বন্ধ থাকায় খাবারের উচ্ছিষ্ট তারা পাচ্ছে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অনেক কুকুর আছে। আমাদের হলগুলো বন্ধ থাকায় এখান থেকে আর খাবারের উচ্ছিষ্ট আসছে না। তাতে তাদের আচরণে একটি পরিবর্তন এসেছে। খাবারের খোঁজে সিঁড়ি দিয়ে ছাদেও উঠে যাচ্ছে। ডাইনিং বন্ধের মধ্যে কুকুর আমার বাসার তিনতলায় উঠে খাঁচা ভেঙে দুটো পাখি খেয়ে ফেলেছে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় তাদের হিংস্র হয়ে ওঠা স্বাভাবিক। তবে সৃষ্টিকর্তা তাদের মধ্যে একটি সিস্টেম ডেভেলপ করে দিয়েছেন। সেটা হলো, তাদের শরীরে সঞ্চিত যে শক্তি, তেল, আমিষ আছে, ওরা যখন খাবার পায় না, তখন সেগুলো থেকে ধীরে ধীরে শক্তি নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। তবে এতে ধীরে ধীরে তাদের শরীরের চামড়া কুচকে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে প্রচুর স্ট্রিট ডগ আছে। তাদের কোনও খাবার দেওয়া হয় না, উচ্ছিষ্টের ওপর বেঁচে থাকে। পশ্চিমা দেশগুলোতে স্ট্রিটডগ নেই। সেসব দেশে সবই রেজিস্টার্ড এবং সুবিধাপ্রাপ্ত। এই করোনার কালে এসব কুকুরের খাবার জোগানো খুব মুশকিল হয়ে যাবে। কুকুরের বড় রোগ একটাই, সেটা হলো জলাতঙ্ক। এই রোগে আক্রান্ত হলে কুকুর মারাত্মক হিংস্র হয়ে পড়ে, তাছাড়া ক্ষুধা ছাড়া সাধারণত তারা হিংস্র হয় না। দীর্ঘদিন খাবার না পেলেও টিকে থাকার শক্তি তাদের আছে। তাদের প্রজনন ক্ষমতা খুব বেশি হওয়ার পরও তারা খাবারের অভাবে টিকে আছে।
কুকুরদের খাবার বিতরণে ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু মানুষ এগিয়ে এলেও সরকারের পক্ষ থেকে শুধু রাজশাহী সিটি করপোরেশনে খাবার বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্দেশে কুকুর, বিড়ালসহ অভুক্ত প্রাণীকে খাবার দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। এর অংশ হিসেবে রবিবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদের সামনে থেকে কুকুরকে খাবার খাওয়ানো শুরু হয়।
ঢাকায় কুকুরদের জন্য এমন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনও উদ্যোগ নেই। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে থাকা প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের পরিকল্পনা নেই। ঢাকার বিভিন্ন বাড়িওয়ালা নিজ উদ্যোগে খাবার দিচ্ছেন। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।