মুসল্লিদের স্বাভাবিক প্রবেশের জন্য মসজিদ খুলে দেওয়ার ঘোষণা গাজীপুরের মেয়রের

গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমগাজীপুর সিটি করপোরেশনের যেসব এলাকায় করোনা সংক্রমণ নেই, সেসব এলাকায় আগামী শুক্রবার থেকে সব মসজিদ মুসল্লিদের স্বাভাবিক প্রবেশের জন্য খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এই কথা জানান। পরে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি ফোনেও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।   

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গাজীপুর জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় গার্মেন্ট কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। কৃষিকাজও চলছে। এছাড়া গাজীপুরের আটটি থানা ও ৫৭ ওয়ার্ডের কোথাও তেমনভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেনি। তাই সামাজিক দূরত্ব মেনে, সামনে চার ফুট ও পাশে দুই ফুট জায়গা রেখে মসজিদে নামাজের সুযোগ দেওয়া হবে। এটা রোজার মাস, মসজিদে প্রার্থনার সুযোগ দেওয়া উচিত। যেসব এলাকায় করোনা সংক্রমণ নেই, সেসব এলাকায় মসজিদগুলোতে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে পারবেন।’

মসজিদে মুসল্লি প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সরকারের নির্বাহী আদেশ থাকার পর কীভাবে এই আদেশ দিলেন সে ব্যাপারে গাজীপুরের মেয়র বলেন, ‘সরকারের আদেশের ব্যত্যয় ঘটবে না। নির্দেশনা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার। সব স্বাস্থ্যবিধি মানলে, পাঁচবার স্যাভলন দিয়ে মসজিদ ধুয়ে নিলে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যত জন ধরবে ঠিক তত জনই নামাজ পড়তে এলে কারও আপত্তি থাকার কথা না। সরকারের নির্দেশের ব্যত্যয় ঘটবে না।’

তিনি বলেন, ‘মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের জন্য আমি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি করে দিয়েছি। যার যার এলাকার মসজিদে নামাজ পড়বেন, কেউ এলাকার বাইরে যাবেন না।’

ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং গাজীপুর জেলা এই দুটি এলাকাকে নিয়েই গাজীপুর বলা হয়। সেজন্য আমরা বলছি, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে করোনা পজিটিভের সংখ্যা অনেক এলাকার চেয়ে কম বলে আমরা মনে করি। এটা আমরা নথিপত্র ঘেঁটে দেখেছি। সেজন্য আমরা মনে করি যেহেতু গার্মেন্ট চালু করে দিয়েছে বিজিএমইএ, সেহেতু আমাদের যেসব ওয়ার্ডে কোনও করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী নেই সেগুলোতে আগামী শুক্রবার থেকে মসজিদভিত্তিক মানুষ নামাজ পড়তে পারবেন। এখন রমজান মাস। এসব এলাকায় মুসল্লিরা যাতে মসজিদে নামাজ পড়তে পারেন সেজন্য আমরা সিটি করপোরেশন থেকে তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবো।’

এসময় করোনাভাইরাস থেকে গাজীপুরসহ সারাদেশ এবং বিশ্ববাসীর মুক্তি কামনা করেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে গাজীপুর প্রতিনিধি কথা বলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন (জিএমপি) কমিশনার আনোয়ার হোসেন সঙ্গে। জিএমপির এই কমিশনার বলেন, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং তা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। যদি কোনও পরিবর্তন করতে হয় তাহলে জেলায় করোনা প্রতিরোধের যে কমিটি রয়েছে সে কমিটির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে জেলার পরিবেশের ব্যাপারে জানাতে হবে। পরে নতুন নির্দেশনা দিলে তা কার্যকর হবে। করোনা পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনা দিয়েছেন, তার বাইরে আমরা যেতে পারি না।

জানতে চাইলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, তিনি (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম) সিটি মেয়র। এরকম সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকলে তা একান্তই তার ব্যক্তিগত। সরকারের এখনও পর্যন্ত ১২ জনের বেশি মুসল্লি মসজিদে উপস্থিত থাকতে পারবে না এমন সিদ্ধান্ত রয়েছে। উনি কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত না মানলে উনার বিষয়। তারপরও তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো।

সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান জানান, গাজীপুরে মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা মোট ৩২৮ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ উপজেলায় এ পর্যন্ত ১১৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও জেলার কালিগঞ্জ উপজেলায় ৯০ জন, কাপাসিয়া উপজেলায় ৭০ জন, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৩২ জন ও শ্রীপুর উপজেলায় ২২ জন। এ পর্যন্ত ওই ভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য জেলা থেকে দুই হাজার ৩৮৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এদিকে, করোনা পরিস্থিতির কারণে মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নির্দেশ অনুযায়ী, শুধু মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমরা মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করবেন। জুমার জামাতে অংশগ্রহণের পরিবর্তে ঘরে জোহরের নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মসজিদে জামাত চালু রাখার প্রয়োজনে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা মিলে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ অনধিক পাঁচ জন এবং জুমার জামাতে অনধিক ১০ জন শরিক হতে পারবেন। বাইরের মুসল্লিরা মসজিদের জামাতে অংশ নিতে পারবেন না। এছাড়া ১০ জন মুসল্লি ও দুই জন হাফেজসহ মোট ১২ জন মসজিদে এশা ও তারাবির নামাজে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।