অভিজ্ঞতা নেই, ভার্চুয়াল আদালতে অংশ নেননি আইনজীবীরা



সিরাজগঞ্জ জেলা আদালতকরোনা পরিস্থিতিতে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার কথা বলা হলেও অভিজ্ঞতা না থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলার আইনজীবীরা আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেননি। সোমবার (১১ মে) রংপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিরাজগঞ্জের আইনজীবীরা আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেননি বলে জানা গেছে।

তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারে আইনি কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিজ্ঞতা না থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা সোমবার (১১ মে) ভার্চুয়াল জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। ভার্চুয়াল জামিন শুনানি নিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে আইনজীবীরা আপত্তির কথা জানান। পরে বিকালে আইনজীবী সমিতির দ্বিতীয় তলায় নেতাকর্মীরা অনির্ধারিত বৈঠকে বসেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শফিউল ইসলাম এবং সভা সঞ্চালনা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মামুন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া আইনজীবী আব্দুর রহিম গোলাপ ও নিজামউদ্দিন খান বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত যুগোপযোগী এবং ভালো। তবে তথ্য-প্রযুক্তির সঙ্গে অনেকেই অভ্যস্ত নন। পাশাপাশি অনেকের স্মার্টফোন না থাকা, ইন্টারনেট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার অভাবসহ জামিন শুনানির কপি  স্ক্যান করাসহ নানা বিষয়ে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কায় আপাতত সাধারণ আইনজীবীরা ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন। সমস্যা সমাধানে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সপ্তাহে দুইদিন সীমিত আকারে সরাসরি আদালত পরিচালনার দাবি জানান জেলার আইনজীবীরা।

রংপুর জেলা জজ আদালতএদিকে করোনা পরিস্থিতিতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে ‘ভার্চুয়াল বিচার কাজ’ পরিচালনায় নিজেদের অক্ষমতার কথা জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জের আইনজীবীরা। সোমবার আইনজীবী নেতারা জেলা ও দায়রা জজ বরাবর মৌখিকভাবে নিজেদের অপারগতার বিষয়ে জানান। নির্দেশনা থাকলেও বিচারকার্য পরিচালনার পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক সরঞ্জামাদি না থাকায় ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা ঈদের আগে আপাতত সম্ভব নয় বলেন জানান অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াসকুরুনি লকেট।

তিনি বলেন, ফেসবুক চালানো এক জিনিস, আর অনলাইনে বিচারকাজ পরিচালনা অন্য বিষয়।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. জাহিদ হোসেন বলেন, অনলাইনভিত্তিক ভার্চুয়াল বিচারকাজ বা কোর্ট পরিচালনায় পূর্ব অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ (ওয়াইফাই), অ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন এবং প্রয়োজনীয় প্র্যাকটিসও অধিকাংশ আইনজীবীর নেই। তাই হঠাৎ এত স্বল্প সময়ে এ ধরনের আদালত পরিচালনা করা খুবই কঠিন।

এছাড়া সোমবার রংপুরের আইনজীবীরাও ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় নিজেদের অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তারা আদালতে কোনও আবেদন করেননি। ফলে কোনও শুনানি হয়নি। বরং বিষয়টি নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হবে বলে মতামত দিয়েছেন খোদ আদালতগুলোর বেঞ্চ ক্লার্কসহ সংশ্লিষ্টরা।

রংপুরের আদালতপাড়ায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই আইনজীবী বলেন, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালতে বিচারকের কাছে জামিনের আবেদন করতে হলে অনলাইনে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, সরকার পক্ষের আইনজীবী, আদালতের বেঞ্চ ক্লার্ক ও বিচারক এই চার জনকে নিয়ে অনলাইনে শুনানি করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন ভালো ইন্টারনেট ব্যবস্থা, পাশাপাশি অনলাইনে যুক্ত হয়ে কীভাবে আদালতের কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে, তাও জানতে হবে। তবে রংপুর আইনজীবী সমিতির ছয়শ’ সদস্যের কারও এ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতিনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আদালতের বেঞ্চ ক্লার্ক এ প্রতিনিধিকে জানান, আদালতে ইন্টারনেটের যে সংযোগ আছে তা ঠিকমতো কাজ করে না। বেশিরভাগ সময় বিকল থাকে। এ অবস্থায় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালত পরিচালনা করা সম্ভব না। এছাড়া বিচারক বাসায় বসে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুনানি করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সবার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। না হলে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালতে শুনানি সম্ভব হবে না।

রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক বলেন, এখনই ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা সম্ভব না। কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে বসে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

গত রবিবার (১০ মে) সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে শুধু জামিন সংক্রান্ত শুনানির বিষয়ে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।