অভিযোগ পাওয়া যায়, টাকা না পেলে ঘরে ভাঙচুর ও মাকে মারধর করতো মিল্লাত। প্রাণ বাঁচাতে ‘ঘরবন্দি’ থাকতেন মা। বেশ কয়েকবার ছেলের মারধরের কারণে গুরুতর আহত হন ওই মা। সর্বশেষ ৭ মে লাঠি দিয়ে মাকে বেধড়ক পেটানো হয়। নিরুপায় হয়ে পরের দিন (৮ মে) রাজধানীর কলাবাগান থানায় ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন মা। সেই মামলায় অভিযুক্ত ছেলেকে গ্রেফতার করলো র্যাব।
মেজর আরেফিন বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল অভিযুক্ত মিল্লাত বাড়ির দিকে আসছে। কারণ, দুই দিন আগেও সে বাড়িতে গিয়ে মাকে হুমকি দিয়ে এসেছিল। এমন খবরে গভীর রাতে পান্থপথের পানি ভবনের সামনে (ফুটওভারের নিচে) নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়। নিরাপত্তা চৌকিতে প্রতিটি গাড়ি পরীক্ষা করা হচ্ছিল। এ সময় দূর থেকে একজন বাইকার র্যাব দেখে মোটরবাইক ঘুরিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে আমাদের সন্দেহ হয়। কয়েকজন সদস্য দৌড়ে গিয়ে তাকে আটক করে। তার ব্যাগ ও শরীর তল্লাশি করতে চাইলে সে (মিল্লাত) মোটরবাইক ফেলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এরপর তাকে ধরে তল্লাশির একপর্যায়ে (মিল্লাত) মোটরবাইকের মিটারের সামনে একটি ব্যাগ পাওয়া যায়। সেই ব্যাগ থেকে একটি ওয়ান শুটারগান ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।’
এজাহারে আরও বলা হয়, ৭ মে মধ্যরাতে ছেলে মিল্লাত মা নুরুন্নাহার রুনুকে মারধর করে। মধ্যরাতে মাদক কেনার টাকার জন্য মিল্লাত প্রথমে মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এরপর কাঠের একটি লাঠি দিয়ে মারধর করলে তার মা মাথা ও কানে আঘাত পান। এর আগেও ছেলে তাকে মাদকের টাকা না পেয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। নিরুপায় হয়ে তিনি ঘটনার পরের দিন কলাবাগান থানায় ছেলের নামে মামলা করেন।
নুরুন্নাহার মামলার পরের দিন বলেন, ‘ঘটনার দিন মিল্লাত অতিরিক্ত মারধর শুরু করে। প্রায় দুই ঘণ্টা জিম্মি করে পেটাতে থাকে। বাথরুমেও যেতে দেয়নি। এরপর আমি ঘর বের হয়ে দৌড়ে নিচে যাই। নিচতলার ফ্ল্যাটে গিয়ে কলবেল চাপি। অনেকক্ষণ পর দরজা খুললে আমি তাদের পা-হাত ধরে আশ্রয় চাই। এরপর তারা আমাকে আশ্রয় দিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে মিল্লাতকে বাসা থেকে বের করে দেয়। কিন্তু বাসায় গিয়ে দেখি সে আবার বাসায়। পরে আমার চিৎকারে অন্য ফ্ল্যাটের লোকজন এসে ওকে বাসা থেকে বের করে দেয়।’
এলিট ফোর্সের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যেহেতু আমরা তাকে খুঁজছিলাম, তাই সে দিনে ঘোরাঘুরি কম করতো। বিশেষ দরকারে রাতে বের হতো। সবশেষ শুক্রবার রাতেও কয়েক মিনিটের জন্য বাসায় আসে মিল্লাত। এ সময় মাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হুমকি দেয়। বের না হলে মাকে হত্যার হুমকি দেয়। তারপর চলে আসে।’
তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা কী নেওয়া হবে জানতে চাইলে মেজর আরেফিন বলেন, ‘গ্রেফতারের পরপরই তার বিরুদ্ধে সব কাগজ প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা তাকে কলাবাগান থানায় হস্তান্তর করবো।’
আরও পড়ুন: মা দিবসেও ছেলের ভয়ে দরজা আটকে ঘরবন্দি থাকেন যে মা