করোনা রোধের নামে মানবদেহে জীবাণুনাশকের ব্যবহার বন্ধে আইনি নোটিশ

আইন নোটিশ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বক্স,চেম্বার,টানেল,গেট,বুথসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মানবদেহে জীবাণুনাশকের ব্যবহার ও প্রয়োগ বন্ধে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, আইইডিসিরের পরিচালক, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এবং পিআইডির প্রধান তথ্য কর্মকর্তাকে ইমেইলে ও ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠানো হয়।

বুধবার (২০ মে) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান জনস্বার্থে এ নোটিশ পাঠান।

নোটিশে বলা হয়, ‘করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। ইতোমধ্যে করোনার জীবাণু থেকে রক্ষার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বনের কথা জানিয়েছে। সম্প্রতি দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বক্স,চেম্বার,টানেল,গেট ও বুথের মাধ্যমে সরাসরি মানুষের দেহে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে।’

নোটিশে আরও  বলা হয় ‘‘গত ১৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে দেশের সব সিভিল সার্জনকে চিঠি দিয়ে জীবাণুনাশক টানেল ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। অথচ গত ১১ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। এক নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়— ‘প্রয়োজনীয় সংখ্যক জীবাণুমুক্তকরণ টানেল স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে।’ ফলে এক মাসের ব্যবধানে এমন বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।’’

‘‘ডব্লিউএইচও মানবদেহে ব্লিচিং থেকে শুরু করে যেকোনও ধরনের জীবাণুনাশকের ব্যবহার নিষেধ করেছে। তারা বলেছে, ‘এইরূপ জীবণুনাশকের প্রয়োগ চোখ এবং চামড়ার বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।’ ডব্লিউএইচও জীবাণুনাশকের ব্যবহার শুধুমাত্র শক্ত আবরণের জিনিসের ওপর ভাগে প্রযোজ্য বলে জানিয়েছে। অর্থাৎ ডব্লিউএইচও ফ্লোর, টয়লেট, মেটাল দ্রব্যাদি, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, আসবাপত্র, ইত্যাদি এবং মানুষের পরিচ্ছন্নতার জন্য সাবান এবং সীমিতভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারের কথা বলেছে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) স্পষ্ট করে তাদের গাইডলাইনে জানিয়েছে— তারা স্যানিটাইজিং টানেলের ব্যবহার সমর্থন করে না। এছাড়া, তারা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, এরূপ জীবাণুনাশক প্রয়োগে করোনারভাইরাস ধ্বংসের কোনও প্রমান নেই। স্যানিটাইজিং টানেলে যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, তা থেকে চোখ, চামড়া এবং শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতির কথা বলা হয়েছে।’’

নোটিশে বলা হয়, ‘ভারতের স্বাস্থ্য অধিদফতর গত ১৯ এপ্রিল জানিয়েছে, মানবদেহে জীবাণুনাশকের ব্যবহার কোনও প্রকারেই সমর্থনযোগ্য নয়। একইসঙ্গে এই ধরনের রাসায়নিকের মাধ্যমে তৈরি করা জীবাণুনাশক শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিকারক বলে নির্দেশনা জারি করেছে। মালয়েশিয়ান সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত গবেষণাতেও মানবদেহে এরূপ জীবাণুনাশক প্রয়োগ বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন এবং ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে যেকোনও  মাধ্যমে মানবদেহে তা ব্যবহার এবং প্রয়োগ বাতিল করেছে।’

‘তাই করোনাকালে জীবাণুমুক্তের নামে মানবদেহে এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশ্রিত জীবাণুনাশক ব্যবহার বন্ধ হওয়া জরুরি। না হলে নাগরিকদের স্বাস্থ্য দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এ কারণে নোটিশ প্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে মানবদেহে জীবাণুনাশকের ব্যবহার ও প্রয়োগ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানানো হলো।’