এই দুঃসময়ে অসহায়দের পাশে ‘সঙ্গে আছি’

তাদের লক্ষ্য, করোনার কারণে এই দুঃসময়ে কোনও মানুষ ও পশুপাখিই যেনো অভুক্ত না থাকেমহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় সারা বিশ্বে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। খাদ্যসহ নানা সংকটে রয়েছে খেটে খাওয়া মানুষ ও পশু-পাখিরা। এই পরিস্থিতিতে আর্তমানবতার সেবায় ‘সঙ্গে আছি’ নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে এগিয়ে এসেছে একদল তরুণ। নিজেরা উদ্যোগী হয়ে অসহায় মানুষ ও পশুপাখিদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন পেশায় ‘সাংবাদিক’ এসব তরুণ। তাদের লক্ষ্য, করোনার কারণে এই  দুঃসময়ে কোনও মানুষ ও পশুপাখিই যেনো অভুক্ত না থাকে।

সংগঠনটি এ পর্যন্ত ৬৫ বেদে পরিবার, হিজড়া ও ডোম জনগোষ্ঠীর ৩০০ জনকে খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছে। ‘সঙ্গে আছি’র ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ঠিকানা সংগ্রহ করে মধ্যবিত্তদের বাসায় গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। রাতে রাজধানীর রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ছিন্নমূল মানুষকে রান্না করা খাবারও খাওয়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে রোজার এই সময়ে রাজধানীতে প্রতিদিন বিকালে পথচারী, রিকশাচালক, ভিক্ষুক ও ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে ইফতারও বিতরণ করছে।

প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে পাঁচ শতাধিক মানুষকে খাবার বিতরণ করা হয়এদিকে রাজধানীর খাবারের হোটেল বন্ধ থাকায় খাবারের উচ্ছিষ্ট জুটছে না কুকুরের ভাগ্যে। অভুক্ত থাকছে কুকুররা। অভুক্ত এসব কুকুরদেরও খাবার দিচ্ছে সংগঠনটি। গভীর রাতে ঢাকার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে প্রায় চার হাজার কুকুরকে খাবার দিয়েছেন এই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা। খাবারের অভাবে বিপাকে পড়েছে পুরান ঢাকার বানররাও। সেখানকার প্রায় ১৫০টি বানরের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন তারা। রাজধানীর বঙ্গবাজারে উড়াল সড়কের নিচেই রয়েছে ৪৫টি টমটমের ঘোড়া। আয় বন্ধ থাকায় ঘোড়ার খাবার দিতে হিমশিম খাচ্ছেন মালিক। খবর পেয়ে, সেখানেও ঘোড়ার একদিনের খাবার দিয়েছে সংগঠনটি।

সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে রমজানের বাকি দিনগুলোতে এই ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ‘সঙ্গে আছি’ সংগঠনের সভাপতি জসিম উদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক বারেক কায়সার। তারা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ঠিকমতো তিনবেলা খাবার পাচ্ছেন না। নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা আরও করুণ। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার লজ্জায় কারও কাছে খাবার চাইতে পারছেন না, না খেয়ে দিন পার করছেন। এসব বিষয় মাথায় রেখে লকডাউনের শুরু থেকে 'সঙ্গে আছি, সঙ্গে থাকুন' স্লোগানে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু করে। সংগঠনটির উদ্যোগে প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে পাঁচ শতাধিক মানুষকে খাবার বিতরণ করা হয়। ইতোমধ্যে সাত হাজার মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন পশু-পাখিকেও খাবার বিতরণ করা হয়।

সংগঠনের দফতর সম্পাদক রফিক রাফি জানান, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ইদ উপহার বিতরণ করা শুরু হয়েছে। অসহায় মানুষদের সহায়তা করতে পারাই এই সংগঠনের সফলতা। সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সব সামর্থ্যবান পেশা-শ্রেণির মানুষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।