এলাকাভিত্তিক লকডাউন প্রত্যাহার চেয়ে রিট

হাইকোর্টসরকার ঘোষিত রেড জোনগুলোতে ঢালাও লকডাউন প্রত্যাহার ও দেশব্যাপী স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় চালুর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (২৯ জুন) রিটকারীর আইনজীবী শেখ ওমর শরীফ রিট দায়েরের বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেন।

আইনজীবী শেখ ওমর শরীফ বলেন, ‘গত ২৮ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুরুল করিমের পক্ষে এ রিট দায়ের করা হয়। মামলাটি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হবে।’

রিট পিটিশনে বলা হয়, ‘সরকার সম্প্রতি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশের বিভিন্ন এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে ঢালাওভাবে লকডাউন জারি করেছে। বাংলাদেশে প্রচলিত “সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮”-এর অধীনে কেবলমাত্র সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চলাচল, বসতবাড়ি কিংবা ব্যবহৃত দ্রব্যাদিতে সরকার নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। অসুস্থ মানুষদের কারণে সমগ্র এলাকা কিংবা সমগ্র শহর লকডাউন করার কোনও আইনগত এখতিয়ার সরকারের নেই।’

‘তাছাড়া কোভিড-১৯ রোগকে এখনও বাংলাদেশ সরকার ওই আইনের অধীনে সংক্রামক ব্যাধি হিসেবে ঘোষণাও করেনি। এ অবস্থায় করোনাভাইরাসের নামে সুস্থ-সবল নাগরিকদের সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত পেশার স্বাধীনতা, চলাচলের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের আইনগত কর্তৃত্ব সরকারের নেই।’

রিট আবেদনে আরও বলা হয়, ‘লকডাউন করোনার মৃত্যুহার থামাতে পারে– এমন ধারণার কোনও প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কারণ সারা বিশ্বে যেসব দেশে করোনায় সবচেয়ে বেশি হারে মৃত্যু হয়েছে (মিলিয়ন জনসংখ্যায় মৃত্যুহার হিসেবে), তার প্রথম ১০টিতেই লকডাউন হয়েছিল। অপরদিকে লকডাউন না হয়েও সুইডেন মৃত্যুহারের দিক থেকে ১১তম অবস্থানে আছে। আবার অনেক দেশে লকডাউন তুলে নেওয়ার পর আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এ ব্যাপারে গত ২২ মে ব্রিটিশ দৈনিক দি সান পত্রিকায় বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

‘রসায়নে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাইকেল লেভিট প্রায় দুই মাস আগেই বলেছেন, “করোনাভাইরাস মহামারি রোধে বিশ্বব্যাপী জারিকৃত লকডাউন অনেক বড় ভুল ছিল। এতে সমাজের বড় ক্ষতির পাশাপাশি কোনও ধরনের হার্ড ইমিউনিটি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”

‘হার্ড ইমিউনিটি হলো এই ধরনের ভাইরাস থেকে রক্ষার একমাত্র বিজ্ঞানসম্মত উপায়। দেশে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে হলে সুস্থ-সবল নাগরিকদের চলাচলের ওপর বেআইনিভাবে আরোপকৃত সব বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে।’

সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ অনুসরণে কেবলমাত্র অসুস্থ ও দুর্বল লোকদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যরক্ষামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাকি নাগরিকদের ওপর থেকে লকডাউনের নামে আরোপকৃত যাবতীয় বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের জন্য রিটে আবেদন জানানো হয়েছে।