বর্তমান ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হবে, কিন্তু এজন্য কোনও বিপদ ডেকে আনা যাবে না। আর চিকিৎসকরা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আগে নাগরিকদের এই সুরক্ষার শর্তগুলো মানার নিশ্চয়তা বিধান করা জরুরি ছিল। প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন করে মানুষের মৃত্যু যে ভাইরাসে সেটাকে আমরা হেলাফেলা করলাম।
আরেকটু ভেতরের দিকে গেলে কৃষি মার্কেটে ঢোকার আগের পথটুকুতে এলোমেলোভাবে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচা চলতে দেখা যায়। কারও যেন মনেই নেই দেশ মহামারির ছোবলে পড়েছে। এক জায়গায় ছয়-সাতজন পরস্পরের অচেনা মানুষ করোনা নিয়েই আলাপ করছেন, চা খাচ্ছেন। কেন এভাবে মাস্ক না পরে রাস্তায় একসঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন, আপনাদের স্বাভাবিক জীবনের জন্যই সাধারণ ছুটি তুলে নেওয়া হয়েছিল জানেন কিনা? প্রশ্নে একজন এগিয়ে এসে বলেন, ‘আপনিও তো বাইরে বের হয়েছেন।’ আমি আমার যা যা মেনে চলার কথা মানছি, আপনি কেন মানছেন না? প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওসব আমাদের হবে না। হলে এতদিন হয়ে যেত।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘এই এলাকায় যে লোকগুলো মুটে-মজুরের কাজ করেন তাদের জোগানদার হিসেবে কাজ করেন এই ব্যক্তি। তিনি নিয়ম না মানলে তার অধীনে যারা কাজ করেন তারা কীভাবে মানবেন?’
এর পরপরই ১৫ জুন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটি আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বলা হয়, করোনাভাইরাস জনিত বৈশ্বিক মহামারির কারণে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘শুরুর দিকে জীবন ও জীবিকাকে সাংঘর্ষিক ভেবেছিলাম। তখন ভাবা হয়েছে জীবিকা বাদ থাক, জীবন বাঁচাই। পরে দেখলাম, এটা আমাদের বাস্তবতার সঙ্গে যায় না। এখন এভাবে টিকতে পারবো না বুঝতে পারছি। এখন তাহলে আমরা কী করতে পারি? ইতোমধ্যে অনেক মানুষ দরিদ্র হয়েছে, অনেকের চাকরি হুমকিতে, বেতন কমতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে যদি কেউ বের হবেন না বলা হয় সেটি কেউ শুনতে চাইবে না। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার (যেটা আমরা এখনও নিজে থেকে করি) ব্যাপক প্রচারণা এখনও দরকার। সেটা না মানলে সামাজিক শাস্তি যেটা শুরুর দিকে নেওয়া হচ্ছিল সেটা অব্যাহত রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানির ঈদকে ঘিরে লম্বা একটা সময় ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড, জীবিকা এমনিতেই কম থাকে। সেক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের সিরিয়াস লকডাউন দিতে পারি। তাতে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।’
এ পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি উল্লেখ করে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা লক্ষ করেছি। মানুষের ভিতর করোনা নিয়ে আতঙ্ক জন্মাক সেটি যেমন আমরা চাইবো না। সংক্রমণের ভীতিটা অব্যাহত থাকুক সেটি চাইবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউন যদি বাস্তবতার কারণে তুলে ফেলতে হয় তাহলে নিয়মগুলো যেন নাগরিকরা কঠোরভাবে মানতে বাধ্য হয় সেদিকে মনোযোগ থাকা উচিত ছিল। এখন যা হচ্ছে তা আমাদের খারাপ ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।’