শিগগিরই সাহেদকে গ্রেফতার করা হবে: র‌্যাব

7করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জালিয়াতি ও রোগীদের সঙ্গে প্রতারণাকারী রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে দ্রুতই গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

বুধবার (৮ জুলাই) দুপুরে র‌্যাব সদর দফতরে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘গত দুই রাত ধরেই তাকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন জায়গায় আমরা খোঁজ করছি। বলে রাখতে চাই, সে অবশ্যই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে না। কারণ, কেউ ধরা-ছোঁয়ার বাইরে না। যারাই আইনের উর্ধ্বে যাওয়ার চেষ্টা করবে আর সেই সাহস দেখাবে অবশ্যই তাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম। তার বিষয়ে অন্যান্য সংস্থাও সতর্ক রয়েছে। সে দেশ থেকে ছেড়ে পালাতে পারবে না।’

পরিচালক বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৯ জনকে আসামি করে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অন্যতম প্রধান আসামি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাহেদ পলাতক রয়েছেন। অভিযানের পরই সে গা ঢাকা দিয়েছে। গতকাল রাতেও আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। সাহেদের মোবাইল নাম্বারগুলো বন্ধ। প্রথমদিন দেখেছিলাম ফেসবুকে একটিভ ছিলো, কিন্তু এখন সে সবকিছু থেকেই নিস্ক্রিয়। তবে আশা করছি অতি দ্রুত তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবো।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অচিরেই প্রতারক সাহেদকে গ্রেফতারের সুখবর দিতে পারবো। যারাই আইনের উর্ধ্বে যাওয়ার চেষ্টা করবে আর সেই সাহস দেখাবে অবশ্যই তাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম।’

করোনার এই সংকটের মাঝেও র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা করোনার শুরু হওয়ার পরই বুঝতে পেরেছি, দেশে কিছু অপতৎপরতা ঘটবে। তাই আমার শুরু থেকেই অভিযান চালিয়েছি। নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ব্যবহৃত গ্লাভস ও মাস্ক ধুয়ে বিক্রির মত অপরাধ ঘটছে। আমরা তাদের গ্রেফতার করেছি। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি।’

‘রিজেন্ট হাসপাতাল হোম ডেলিভারির মতো বাসায় গিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে দ্রুততার সঙ্গে রিপোর্ট সরবরাহ করছিলো। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করি। এরপর কেঁচো খুড়তে আসলে সাপ নয়, অ্যানাকোন্ডা বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত দুদিন ধরে রিজেন্টের বিরুদ্ধে আমরা ধারাবাহিক একটি অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তারা নমুনা নিয়ে টেস্টের সঠিক রিপোর্ট পাঠায় না। প্রায় সাড়ে চার হাজার নমুনার টেস্ট না করেই কম্পিউটার অপারেটর মনগড়া রিপোর্ট দিয়ে সরবরাহ করেছে। এর ফলে বুঝে না বুঝে অনেকেই ভুয়া পজিটিভ হয়ে কোয়ারেন্টিনে চলে গেছেন। তারা প্রথমবার টেস্টে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা নিতেন পরবর্তী টেস্টের জন্য আবার এক থেকে দেড় হাজার টাকা আদায় করতেন।’

‘সরকারের সঙ্গে বিনামূল্যে চিকিৎসার চুক্তি স্বাক্ষরের নামে আসলে হঠকারিতা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা রোগীদেরকে বিপুল পরিমাণ বিল দিতে বাধ্য করেছে। ৫ সদস্যের একটি পরিবার গত ২০দিনে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা রিজেন্টের কর্মচারী পলাশকে দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’

রিজেন্ট হাসপাতাল ১০ হাজার টেস্ট করেছে। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার টেস্টের সরকারি কাগজ রয়েছে। বাকিগুলোর কোন কাগজ নেই। প্রতিষ্ঠানটি তিন মাসে প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা নিয়েছে। সেসব উৎস এবং কোথায় গিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ে মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান র‌্যাব সদর দফতরে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম।

তিনি আরও বলেন, রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদের প্রতারণার দায়ে অতীতেও আটক হয়েছিলো, জেলে খেটেছে। মিথ্যাকে কেন্দ্র করেই তার উত্থান। ভুয়া পরিচয় দিয়ে নানাভাবে প্রতারণা করেছে মানুষের সঙ্গে জড়িত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘তিনি একটি এমএলএম কোম্পানি করে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলো, যার জন্য জেলও খেটেছে। আমরা জানতে পরছি তার আরো অনেক নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক লাইসেন্সও নেওয়া হয়নি। উল্লেখ করতে চাই, প্রতিদিন নানা জায়গা থেকে অসংখ্য ফোন রিসিভ করছি, তারা সাহেদের অপকর্ম-অরাজকতার বিষয়ে জানাচ্ছে।’

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করেই সে প্রতারণা করতো বলেও তিনি মন্তব্য করেন লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম ।

আরও পড়ুন:

করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতি: রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদসহ ১৭ জনের নামে মামলা 

রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান শাহেদসহ ১৭ জনের নামে মামলা

এবার রিজেন্ট হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

পাবলিক হেলথের নামে করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দিতো রিজেন্ট