ফুটপাতের দোকানে প্যাডেল ফিল্টারে বিশুদ্ধ পানি

করোনা সংক্রমণ রোধে সহায়ক এই ফিল্টারঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সামনের প্রধান ফটকের ফুটপাতে একটি পানির ফিল্টার রাখা। লোকজন আসছেন পাশে রাখা ওয়ান টাইম ইউজ গ্লাস ট্যাপের নিচে ধরে পা দিয়ে নিচের একটি প্যাডেলে চাপ দিতেই গ্লাস ভরে যাচ্ছে পানিতে। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সকালে রোগীর একজন সহযোগী হন্তদন্ত হয়ে পানির জন্য দোকানের দিকে যাওয়ার পথে চোখে পড়ে ব্যানার। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ব্যানারটি পড়ে জানতে পারেন গেটে লাগোয়া এই প্যাডেল ফিল্টারের পানি বিনামূল্যে পাবেন যেকেউ। সামনে গিয়ে একটি গ্লাস নিয়ে কিছুক্ষণ উপর নিচ হয়ে দেখে বুঝতে পারলেন পা দিয়ে চাপ দিলেই পানি পাবেন।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাস্তায় চলার পথে কেউ পানির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে এটা তো খুবই ভালো উদ্যোগ। বলা হচ্ছে হাতের সংস্পর্শে করোনা ভাইরাস ছড়ায়। এখানে হাতের ব্যবহার না হওয়ায় অনেকটা নিরাপদ বোধ করছি।’

সাধারণত পানির ফিল্টারের ট্যাপ হাত দিয়ে চালু করতে হয়। করোনাকালে সেই ফিল্টার পাবলিক স্পেসে যখন ব্যবহার করা হয়, তখন এক ট্যাপে অসংখ্য মানুষ হাত দিয়ে স্পর্শ করায় ভাইরাস সংক্রামণের শঙ্কা দেখা দেয়। ফলে হাতের বদলে প্যাডেল ট্যাপের ব্যবহারের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবায় কয়েকজন মিলে তৈরি করেছেন এই প্যাডেল ট্যাপ। বর্তমানে এ ধরনের দুটি যন্ত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং মুগদা হাসপাতালের সামনে দেখা যাচ্ছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, এই ফিল্টার থেকে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য আগতদের পাশাপাশি অন্যরা নিরাপদে এবং বিনামূল্যে পানি পান করতে পারছেন। এই মহামারিকালে প্রচণ্ড রোদে অপেক্ষারত ক্লান্ত মানুষের জন্য এটি খুব সামান্য সহায়তা হলেও এর ফলে হয়তো অনেক মানুষ সংক্রমণের ঝুঁকি ছাড়াই তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারবেন। আর এই কাজটি তারা তাদের অকাল প্রয়াত বন্ধু পদার্থবিজ্ঞানী ড. রাসেল পারভেজের স্মরণে করছেন বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান তারা।

প্যাডেলে চাপ দিতেই গ্লাস ভরে যাচ্ছে পানিতেরোগীর স্বজন আনোয়ার হোসেন মনে করেন এ ধরনের উদ্যোগ আরও জরালোভাবে নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, ‘এখন মানুষ কাজের তাগিদে বাইরে আসছে। ফুটপাতের দোকানগুলো খুলে গেছে। ছোট ছোট সতর্কতা আমাদের রক্ষা করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ কমানোর লক্ষ্যে আমাদের সবার ফিল্টার বেসিনসহ সবকিছু প্যাডেল বেজড হওয়া উচিত। যেহেতু সেন্সর (কলের নিচে হাতে দিলেই পানি পড়বে) ট্যাপ প্রযুক্তি ব্যয়বহুল, তাই স্কুল, হাসপাতাল, অফিস থেকে শুরু করে সব পাবলিক প্লেস, মার্কেট, হোটেল ও রেস্টুরেন্টে প্যাডেলের এই ফিল্টার খুব কাজের হতে পারে।’

আয়ডিয়াটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক আসমা খাতুনের মাথা থেকে আসা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত হওয়ার শুরুর দিকে যখন মুগদা হাসপাতালের সামনে পরীক্ষা করতে আসা অপেক্ষমাণদের ছবি ও সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখছিলাম, বেশ অস্থির লাগছিল। এত মানুষ এতটা সময় দাঁড়িয়ে থাকেন, পানির ব্যবস্থা নেই। শুরুতে আমরা পানির ব্যবস্থা করতে একটি ফিল্টারের ব্যবস্থা করি সেখানে। এরপর মনে হয়, ফিল্টার দিয়ে বিপদ বাড়বে। কেননা একটি কল একাধিক মানুষ খালি হাতে খুলবে। এটা ভাবতে ভাবতে মনে হচ্ছিল এমন কিছু করা দরকার যেখানে হাতের ব্যবহার করতে হবে না। সেই বিকল্প ভাবতে গিয়ে প্যাডেল ফিল্টারের বিষয়টি মাথায় আসে এবং আমার পরিচিত অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে আলোচনা করে কাজটি দাঁড় করানো হয়।’

অ্যাক্টিভিস্ট বাকী বিল্লাহ শুরুর উদ্যোগের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘এই যন্ত্রটি তৈরি করতে আমাদের হাজার চারেক টাকা খরচ হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হবে ফিল্টারের খরচ। মানুষ বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিন্তে পান করবে সেটাই একমাত্র লক্ষ্য। কেউ যদি এটা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরও কিছু জায়গায় এই ফিল্টার দেখতে চান, তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’