পিতৃহারা অবুঝ শিশুটির স্বপ্নহীন যাত্রা!

 

শুভমাত্র আট বছর বয়স তার। তিন বছর আগে বাবাকে হারিয়ে প্রতিবন্ধী মাকে নিয়ে মানবেতর দিন কাটাতে হচ্ছে অবুঝ শিশুটিকে। সময়ের আগেই বাস্তবতা তাকে যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে জীবনের অর্থ। এই বয়সে যখন পরিবার তার দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল। সেখানে নিজেই এখন পরিবারের দায়িত্ব নিতে ছুটে চলেছে স্বপ্নহীন অজানা পথে। বলছি নোয়াখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চল সুবর্ণচরের শুভ চন্দ্র সূত্রধরের কথা। তার সঙ্গীরা যখন স্বপ্ন গড়ার প্রত্যয় নিয়ে স্কুলের দরজায়, শুভ তখন স্বপ্নহীন পথে কাজের সন্ধানে। বাবাকে হারিয়ে প্রতিবন্ধী মা সীমা রানী শীল ও দুই বোনকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছে শুভ।

সুবর্ণচরের চর আমান উল্লাহ ইউনিয়নে রাখাল শীলের বাড়িতে মাসহ আরও দুই বোনকে নিয়ে একটি কুঁড়েঘর থাকে শুভ। শিশু শ্রেণিতে ভর্তির পর অর্থাভাবে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। বড় ও ছোট বোনের অবস্থাও তার মতো। বাবা জয়দেব চন্দ্র সূত্রধরের মৃত্যুর পর বড় বোন আর তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। যেখানে দুই বেলা খাবার জোগাতে মা সীমা রানী হিমশিম অবস্থায়, সেখানে নিজ সন্তানদের স্কুলে পাঠানো তার কাছে হয়তো বিলাসিতা মনে হয়েছে। নিজে প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোনও কাজে যেতে পারে না সীমা রানী শীল। প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও সামান্য এই অর্থে কী আর চলে? তাই একমাত্র অবুঝ ছেলেকে কাজে পাঠান মা। ছোট শিশু শুভ কাজ পারে না; তবুও কাজে যায়।

শুভরা এই ঘরে থাকেশনিবার (২৫ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে কাজে যাওয়ার পথে একটি মোটরচালিত রিকশায় এই প্রতিবেদকের দেখা হয় শুভর সঙ্গে। কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করতেই সরল কন্ঠে উত্তর দেয় ‘কাজে যাচ্ছি’। বাবা-মা সম্পর্কে জানতে চাইলে জবাবে বলে, ‘বাবা নেই, আর প্রতিবন্ধী মা ঘরে বসে আছে।’ তার চোখ-মুখের চাহনি দেখলে বোঝা যায়, ইচ্ছা না থাকলেও প্রয়োজনের তাগিদে কাজে যেতে বাধ্য সে।

পরে শুভ’র মায়ের সঙ্গে দেখা করতে তাদের কুঁড়েঘরে যায় এই প্রতিবেদক। জানতে চাইলে সীমা রানী শীল বলেন, ‘শুভকে পড়াশোনা করানোর ইচ্ছে আমারও আছে। কিন্তু আমি প্রতিবন্ধী। দুই মেয়ে নিয়ে কী করবো? খাবার জোটে না ঠিক মতো, তাই বাধ্য হয়ে অবুঝ ছেলেকে কাজে পাঠাই।’

শুভদের থাকার ঘরশুভর মাকে ছোটখাটো একটি ব্যবসার মূলধন জোগাড় করে দিতে পারলে হয়তো শুভ ও তার দুই বোন স্কুলে যেতে পারবে। তাই শিশুটির পরিবারকে যদি কেউ সাহায্য করতে চান, তবে ০১৯৩৪৪৬০০৫০ এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।