প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়মাঠ পর্যায়ের অসন্তোষ মেটাতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিম্ন ধাপের সহকারী শিক্ষকদের বেতন বাড়াতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। দীর্ঘ আন্দোলনের পর বেতন গ্রেড বাড়ালেও নিম্নধাপে নির্ধারিত সহকারী শিক্ষকদের বেতন ফিক্সেশনে কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলে মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) বেতন একধাপ উপরে নির্ধারণ করার জন্য অর্থ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামীম আরা নাজনীন বলেন, ‘নিম্নধাপে বেতন নির্ধারণ করায় নতুন গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করলে বর্তমান বেতনের চেয়ে শিক্ষকদের বেতন অনেকের কমে যাচ্ছে। সে কারণে একধাপ ওপরে বেতন নির্ধারণ করলে এই সমস্যা থাকবে না। তাই অর্থ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১১তম গ্রেডের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে তাদের বেতন গ্রেড উন্নীত হয়। শিক্ষকদের চাওয়া ছিল ১১তম গ্রেড। কিন্তু তাদের দেওয়া হয় ১৩তম গ্রেড। এতে নিম্নধাপে মূল বেতন ফিক্সেশন করলে উল্টো বেতন কমে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতির শিকার হবেন লাখ লাখ শিক্ষক। কারণ বেশিরভাগ শিক্ষকই ইনক্রিমেন্ট পেয়ে আগে থেকে ১৩ গ্রেডের কাছাকাছি বা বেশি বেতন পাচ্ছেন।

অবশেষে বিষয়টি সুরাহা করার পদক্ষেপ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নিম্নধাপের শিক্ষকদের একধাপ ওপরে বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করে চিঠিতে দেওয়া হয় অর্থ বিভাগে।

চিঠিতে বলা হয়, অর্থ বিভাগের গত বছর ৭ নভেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড-১৪ (প্রশিক্ষপপ্রাপ্ত) এবং বেতন গ্রেড-১৫ (প্রশিক্ষণবিহীন) থেকে গ্রেড-১৩ তে উন্নীত করা হয়।  আর প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড-১২ (প্রশিক্ষণবিহীন) থেকে গ্রেড-১১ তে উন্নীত করা হয়। এতে কিছু শিক্ষকের বর্তমান মূল বেতনের নিম্নধাপে বেতন নির্ধারণের কারণে অনেক শিক্ষকের বেতন কমে যাচ্ছে। এতে তারা বেতন বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন। সে কারণে মাঠ পর্যায়ে বেতন ফিক্সেশন হচ্ছে না।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, সারাদেশে ৬৫,৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭৭২ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল উন্নীতকরণ শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও শিক্ষকগণের বর্তমান মূল বেতনের নিম্ন ধাপে বেতন নির্ধারণের কারণে মাঠ পর্যায়ে শিক্ষকদের মাঝে হতাশা এবং অসন্তোষ বিরাজ করছে। ফলে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ার পরিবর্তে ক্ষুণ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বেতন স্কেল উন্নীতকরণ ও বেতন নির্ধারণের বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদাহরণ তুলে ধরে চিঠিতে জানানো হয়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের কানুনগো/উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার পদধারীদের উন্নীত বেতন স্কেলে বেতন নির্ধারণে এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ সংশ্লিষ্ট স্কেলের উচ্চধাপে বেতন নির্ধারণ করে বৈষম্য নিরসনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই নির্দেশনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে মাঠ পর্যায়ে শিক্ষকদের মাঝে সৃষ্ট অসন্তোষ নিরসন হবে মর্মে প্রতীয়মান হয়।

এমতাবস্থায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতো সংশ্লিষ্ট বেতন স্কেলের উচ্চধাপে বেতন নির্ধারণে অর্থ বিভাগের নির্দেশনা জারির জন্য অনুরোধ করা হলো।