ডুজার সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলার বিচার দাবিতে ঢাবিতে মানববন্ধন

সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধনঈদুল আজহার দিন ঝিনাইদহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সাধারণ সম্পাদক এইচএম ইমরান হোসেনের ওপর হামলার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় বক্তারা করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে ঝিনাইদহে ডুজার সাধারণ সম্পাদক এইচএম ইমরান হোসেন, সিলেটে ঢাবির ছাত্রলীগ নেতা সাইদ খান শাওন, কক্সবাজারে সাজ্জাদ হোসেন শিহাবসহ সারাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীরা হামলা শিকার হয়েছেন, হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে এই মহামারি পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় একটি কমিটির মাধ্যমে ‘হেল্পলাইন’ বা ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করতে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যার যার অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু এটা দুঃখজনক যে, এই প্যানডেমিকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তারা বিভিন্নভাবে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। আমরা এই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়ে এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অতিদ্রুত এসব হামলার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে  জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

ডুজার সাধারণ সম্পাদক এইচএম ইমরান হোসেনের হামলার ঘটনা উল্লেখ করে সৈকত বলেন, ‘আপনারা জানেন ঝিনাইদহে কোরবানির দিন মিসকিনের মাংস আত্মসাতের প্রতিবাদ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ডুজার সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দ্বারা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। গণমাধ্যমে হামলার বিষয়টি আসার পরও প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এটা দুঃখজনক, এটা লজ্জার। আমরা চাই না এদেশে কোনও নাগরিক বিচারহীনতায় থাকুক। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই নয়, দেশের যেকোনও নাগরিকের পাশে ঢাবি শিক্ষার্থীরা রয়েছেন।’

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম বলেন, ‘আজকে এই রাজু ভাস্কর্য থেকে ইমরানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী হামলার শিকার হয়েছে, তাদের ওপর হামলার দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় একটি ‘হেল্পলাইন’ বা ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করতে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের একটি দাবি থাকবে। যাতে দেশের যেকোনও প্রান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও শিক্ষার্থী হয়রানি, অত্যাচার কিংবা হামলার শিকার হলে সুষ্ঠু বিচার পায়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তারেক হাসান নির্ঝর বলেন, ‘এই মহামারিতে  সারা বিশ্বের মানুষ যখন আতঙ্কিত হয়ে ঘরবন্দি, আমরা যখন একটি সহিষ্ণু পৃথিবীর দিকে এগোনোর কথা ভাবছি, অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে মানবতাবোধ জাগ্রত হওয়ার চিন্তা করছি– ঠিক সেই সময়ে আমাদের সহপাঠীদের হামলার বিচারের দাবিতে এখানে দাঁড়াতে হয়েছে। এটা জাতিগতভাবে আমাদের জন্য যেমন লজ্জার, তেমনি আমাদের বিচারহীনতার দীর্ঘদিনের সংস্কৃতিকে তুলে ধরছে।’

হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে নির্ঝর বলেন, ‘ইমরান আমাকে জানিয়েছে মামলার দুই দিন পর্যন্ত পুলিশ তৎপর ছিল। কিন্তু তারপর আর কোনও তৎপরতা ছিল না তার এলাকায়। পুলিশ এ বিষয়ে আর কথা বলছে না। উপরন্তু যে মেম্বার ইমরানের ওপর হামলা চালিয়েছে তারা এখন তাকে চারিত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করছে। নানা ধরনের অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে।’ এই প্যানডেমিকে সারা দেশে কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী হামলার শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানান তিনি।

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন– বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) সভাপতি রাহাদ হোসেন, ইশা ছাত্র আন্দোলন ঢাবি শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি-ভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষে ঢাবি চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ফেরদৌস খান নির্ঝর, ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র জোট নেতা তাওহীদ তানজীম ও  ডুজার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম আবির প্রমুখ৷