করোনা মোকাবিলায় চার পরিকল্পনা বিমানের

 

ড্রিমলাইনার গাঙচিল (ছবি: ফোকাস বাংলা)

করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের মতো বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলোও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছে। জানা গেছে, দেশের  এয়ারলাইন্সগুলোর এই ক্ষতির পরিমাণ তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলো। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এ লক্ষ্যে চারটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে লোকসান ঠেকিয়ে লাভের মুখ দেখার আশা বিমানের।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর ধরে বিভিন্ন বিভাগে প্রয়োজনীয় দক্ষ ও কারিগরি জনবল নিয়োগ না হওয়ায় এমনিতেই নানা সংকটে রয়েছে বিমান। দক্ষ জনবল না থাকায় গুণগত সেবা দিতেও ব্যর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি। এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি ও ভাড়া হ্রাসের কারণেও চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বিমান। এর মাঝে করোনাভাইরাসের মহামারিতে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া, নতুন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণসহ নানা কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিমান চলাচলে সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় লাভজনক  ব্যবসা পরিচালনা করা ভীষণ রকমের কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ কারণে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি লাভের ধারা অব্যাহত রাখতে চারটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। গত ২৯ জুলাই সরকারের কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতায় বিমান ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক  বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোকাব্বির হোসেন চুক্তিতে সাক্ষর করেন।  এই চুক্তিতে বিমান নিজেদের পরিকল্পনার বিষয়টি তুলে ধরে।

বিমানের এই চারটি পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে—স্ট্র্যাটেজিক হিউম্যান ক্যাপিটাল প্ল্যানিং প্রণয়ন করা। এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান, যথাযথ পদায়ন, মূল্যায়ন, প্রণোদনার মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তোলা। বিমান কর্তৃপক্ষ মনে করে—দক্ষ জনবল সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হবে।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক রুট বৃদ্ধি ও ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বিমানের। গুয়াংজু, টরেন্টো, টোকিও, চেন্নাই, কলম্বো, মালে, শারজাহ, সালালাহ,  বাহরাইন ও নিউইয়র্ক রুটে ফ্লাইট চালু করতে চায় বিমান। নতুন রুট চালু ও পুরনো রুটে ফ্লাইট বাড়ানো গেলে লাভের ধারা বজায় রাখা সম্ভব বলে মনে করছে এয়ারলাইন্সটি।

সরকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করছে। তবে বিমান মন্ত্রণালয় আগেই ঘোষণা দিয়েছে, সেখানে এককভাবে কাউকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ দেওয়া হবে না। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে তৃতীয় টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ দেওয়া হবে। শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করছে—এই খাতটি বিমানের আয়ের অন্যতম উৎস। তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পেতে এখন থেকেই আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সেবা প্রদানের জন্য বেবিচকের গাইডলাইন অনুসারে কর্মী ও যন্ত্রপাতির প্রস্তুতি নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে বিমানের।

বিমানের বহরে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উড়োজাহাজ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব উড়োজাহাজের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রয়েছে বিমানের নিজস্ব প্রকৌশল বিভাগ। তবে বিমান বহরের ড্রিমলাইনারগুলোর সি-চেক করার সক্ষমতা নেই বর্তমান প্রকৌশল বিভাগের। ফলে ছয়টি ড্রিমলাইনের সি-চেক করতে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হবে বিমানকে। প্রত্যেকটি উড়োজাহাজকে তিন বছর পর সি-চেক করতে হবে। এজন্য বিমানের প্রকৌশল বিভাগ নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে চায়। বিমান আইএটিএ সেফটি অডিট ফর গ্রাউন্ড অপারেশনস সনদ অর্জনে সক্ষমতা বাড়াতে পরিকল্পনা করছে। একইসঙ্গে উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণে  ইউরোপিয়ান এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি-১৪৫  (ইএএসএ-১৪৫) সনদ অর্জনে পদক্ষেপ নেবে বিমান। মেরামত কাজের জন্য শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমানের একটি নিজস্ব হ্যাঙ্গার রয়েছে। তবে বিমান উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও একটি আধুনিক ও সুপরিসর হ্যাঙ্গার নির্মাণ করতে চায়।

এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে নতুন তিনটি ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ এনজি বিমানের একটি যুক্ত হবে নভেম্বর মাসে। ক্রয় চুক্তি অনুসারে বাকি দুটি যুক্ত হবে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে। যদিও নতুন তিনটি ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ এনজি বিমান এ বছর মার্চ, মে ও জুনে সরবরাহ করার কথা ছিল কানাডিয়ান বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বম্বার্ডিয়ার ইনকরপোরেশনের। করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে সময়মতো বিমানগুলো সরবরাহ করতে পারেনি বম্বার্ডিয়ার ইনকরপোরেশন। নতুন তিনটি ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ এনজি যুক্ত হলে অভ্যন্তরীণ রুটে সেগুলো ব্যবহারের পরিকল্পনা বিমানের।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোকাব্বির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সারাবিশ্বের এয়ারলাইন্সগুলোর মতো বিমানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিমানের বহরে নতুন ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ বিমানের একটি যুক্ত হবে নভেম্বর মাসে, বাকি দুটি যুক্ত হবে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে। বিমান নতুন হ্যাঙ্গার তৈরির পরিকল্পনা করছে, তবে এর জন্য বেবিচকের কাছ থেকে জায়গা বরাদ্দ ও অনুমতি প্রয়োজন।’