তদন্ত রিপোর্ট: অপেশাদারিত্বের কারণে পল্লবী থানায় বিস্ফোরণ!

পল্লবী থানাপল্লবী থানার ভেতরে বোমা বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের অপেশাদারিত্বকে দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি। সোমবার (১০ আগস্ট) তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে থানাগুলোতে এ ধরনের বিস্ফোরক বা বোমা জাতীয় বস্তু কীভাবে ‘হ্যান্ডল’ করবে—তা নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে বোমা, অস্ত্র ও গুলি কীভাবে, কার মাধ্যমে এসেছে—তা খতিয়ে দেখবেন অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

থানার ভেতরে বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের গঠন করা তদন্ত কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘থানার ভেতরে বোমা কীভাবে, কী কারণে বিস্ফোরিত হয়েছে, তা তদন্ত করেছি। এক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্টের সমস্যা ছিল। সঠিক প্রক্রিয়ায় তা করা হয়নি। সংশ্লিষ্টদের পেশাদারিত্বের অভাব ছিল। রিপোর্টে আমরা সেগুলো উল্লেখ করেছি। এছাড়া থানাগুলোকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, তাও সুপারিশ করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই ভোরে রাজধানীর পল্লবী থানায় ওজন মাপার যন্ত্রের মতো দেখতে হাতে বানানো একটি বোমা বা আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভড ডিভাইসড) বিস্ফোরিত হয়। এতে থানার চার পুলিশ সদস্যসহ পাঁচ জন আহত  হন। বিস্ফোরণের আগে রফিকুল ইসলাম (৪০), শহিদুল ইসলাম (২৩) ও মোশাররফ হোসেন (২৬) নামে তিন জনকে গ্রেফতার করেছিল পল্লবী থানা পুলিশ।

তবে অভিযোগ রয়েছে, গুলিসহ অস্ত্র ও বিস্ফোরক অন্য জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হলেও সেগুলো তাদের (গ্রেফতার তিন আসামি) কাছ থেকে উদ্ধার দেখানো হয়েছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর তায়জুল ইসলাম বাপ্পী ও পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানার মধ্যকার দ্বন্দ্বের জেরে পুলিশের সহায়তায় এই ‘নাটক’ সাজানোর চেষ্টা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে যুবলীগ নেতা জুয়েল রানাকে ফাঁসানোর জন্য এই ফাঁদ পাতা হয় এবং এই পুরো বিষয়টির সঙ্গে পুলিশ জড়িত। কিন্তু  দুর্ঘটনাক্রমে বিস্ফোরণ ঘটায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

মিরপুর-পল্লবী জোনের পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততায় এ পরিকল্পনা করা হয়েছিল—এমন তথ্য সামনে চলে আসায় বিস্ফোরণের ১০ দিনের মাথায় একযোগে মিরপুরের উপ-কমিশনার, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পল্লবী), সহকারী পুলিশ কমিশনার (পল্লবী), পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং দুই পরিদর্শককে (তদন্ত ও অপারেশন) বদলি করা হয়। তবে এ বদলি বিস্ফোরণ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বলে দাবি করেছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ওয়ালিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই বদলি সাধারণ প্রক্রিয়ার অংশ।’

এদিকে পুলিশের হাতে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ (এসএজি)। বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) তিন জনের ১৪ দিনের রিমান্ড শেষ হবে। সিটিটিসির উপ-কমিশনার (স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ) আব্দুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। এ ঘটনায় আরও যারা জড়িত রয়েছেন, তাদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেফতার করতে পারলে ঘটনার কারণ ও উদ্দেশ্য পরিষ্কার হবে।’