বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করবে কমিশন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় জড়িত ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়ে রয়েছে গুঞ্জন ও নানা মতভেদ। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের সেই নৃশংস হত্যার পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজতে জাতীয় তদন্ত কমিশনের দাবি তুলেছিল বেশ কিছু রাজনৈতিক দল। তাই বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার বিচারের পর এবার সেই কমিশন গঠনে উদ্যোগী হয়েছে সরকার।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিদের বিচার বন্ধে জারি করা হয়েছিল ইনডেমনিটি অর্ডার (দায়মুক্তি আদেশ)। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর ইনডেমনিটি বাতিল করে ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ২১ বছর পর শুরু হওয়া ওই বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ সালে আত্মস্বীকৃত কয়েকজন খুনির রায় কার্যকর করা হয়। তবে ওই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি এখনও পলাতক রয়েছে। সেই খুনিদের দেশ ফেরাতেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।

হত্যাকাণ্ডের বিচার হলেও ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়ে রয়ে গেছে ধোঁয়াশা আর গুঞ্জন। তাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের শনাক্ত করা এবং যারা বেঁচে নেই, প্রয়োজনে তাদের মরণোত্তর বিচারের দাবি তোলা হয়। সেই সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচনে জাতীয় তদন্ত কমিশন গড়ে তোলার জোর দাবি তোলে দলগুলো।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘কমিশনটি কেন করা হবে, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন, তাদের (ষড়যন্ত্রকারীদের) বিচার করতে। কিন্তু মরণোত্তর কারও বিচার আইনের মাধ্যমে করা যায় না। সেক্ষেত্রে আইনের বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। তবে মরণোত্তর যেটা করা যায়, সেটা হচ্ছে কমিশনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করে যাওয়া। সাক্ষের বর্ণনা থেকে জানা যাবে, কারা বঙ্গবন্ধুর হত্যার নেপথ্যে ছিল এবং এটা প্রমাণিত হয়েছে। এটি করতে পারলে শত শত বছর পরেও মানুষ জানবে যে আমরা প্রতিহিংসার জন্য কিছু করিনি। আমরা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে নিরাপদ করার জন্য, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে আমরা সারা বিশ্বে পরিচিত করার জন্যই এ কমিশন গঠন করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা ওই হত্যাকাণ্ডের কুশীলব, ষড়যন্ত্রকারী ছিল, যারা সাহস করে সামনে আসতে পারেনি, সেই ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে আমাদের এ কমিশন গঠিত হবে। যাতে করে তাদের (ষড়যন্ত্রকারী) অনুসারীরা আগামীতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে নষ্ট করতে না পারে।’

জানা গেছে, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিকভাবে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি আদালতের রায়ে উল্লেখ ছিল। কিন্তু সেখানে বিস্তর বিবরণ উঠে না আসায় ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজতে কমিশন গঠন করতে আলোচনা শুরু করেছে সরকার। সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি, আইনজীবী ও গবেষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সমন্বয়ে গড়ে তোলা হতে পারে এ তদন্ত কমিশন।

তদন্ত কমিশন গঠনে অগ্রগতির বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘কমিশনের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি।’


আরও পড়ুন:
সেই কালরাতে যা ঘটেছিল

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় যেভাবে