‘র‍্যাগ ডে’ কি সত্যিই অমানবিক!

‘র‌্যাগ ডে’ পালন করছেন শিক্ষার্থীরা: ফাইল ছবি ‘র‌্যাগ-ডে’কে অমানবিক, নিষ্ঠুর ও নীতিবহির্ভূত উৎসব আখ্যা দিয়ে তা নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিন বন্ধুদের নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠতে দিনটি পালন করে থাকে শিক্ষার্থীরা। ঢাবি দিনটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। প্রশ্ন উঠেছে –‘র‍্যাগ ডে’ কিভাবে নিষ্ঠুর!    

বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ‘র‍্যাগ ডে’ উদযাপন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল। এর কারণ সম্পর্কে বলা হয়, এটি অমানবিক, নিষ্ঠুর ও নীতিবহির্ভূত উৎসব। দিনটি কীভাবে নিষ্ঠুর হয়, জানতে চাইলে সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যান ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, ‘র‍্যাগ ডে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতার আলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

এদিকে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনায় মুখর ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী কাজী আনিস ফেসবুকে লিখেছেন, “র‍্যাগ ডে নিষিদ্ধ-রিপোর্ট দেখার পর 'হোয়াট ইজ র‍্যাগ ডে' লিখে গুগলে সার্চ দিলাম। এক বাংলা ডিকশনারি দেখাইলো, 'ছাত্রছাত্রীদের বাৎসরিক হৈ-হুল্লোড়ের দিন।’ তিনি আরও লিখেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় কি আমার বাসাটাকেও আনা যায়! বাচ্চা দুইটার হৈ-হুল্লোড়ে রাতে ঘুমাতে পারতেছি না।”

সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ‘র‍্যাগ ডে’র কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, “আমাদের সেই ‘অমানবিক, নিষ্ঠুর, নীতিবহির্ভূত উৎসব’ র‍্যাগ ডে। নাদিরা শারমিনের পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, ‘র‍্যাগ ডে’র দিন বন্ধুরা মিলে ছবি তুলেছেন, ব্যানার নিয়ে শোভাযাত্রা করছেন এবং ঘাসের মধ্যে বসে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করছেন।

নাদিরা শারমিনের পোস্ট

সাংবাদিক আঙ্গুর নাহার মন্টি নাদিরা শারমিনের পোস্টে কমেন্টের ঘরে একটি গ্রুপ ছবি দিয়ে ক্যাপশনে লিখেন, ‘এটা আমাদের নিষ্ঠুরতম র‍্যাগ ডে!’

নাদিয়া শারমিনের পোস্টে আঙ্গুর নাহার মন্টির ছবিসহ কমেন্ট সাংবাদিক শেখ হারুন তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ‘র‍্যাগ ডে’র ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আমরা অমানবিক এবং নিষ্ঠুর ছিলাম! কারণ আমরাও র‍্যাগ ডে পালন করেছিলাম।’  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন প্রেস বিজ্ঞপ্তির ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, “নিষিদ্ধ হওয়ার কথা র‍্যাগিং, গেস্টরুম সংস্কৃতি। র‍্যাগ ডে আবার কি ‘অমানবিক নীতি বহির্ভূত’ কাজ করলো! বর-বউ সেজে ‘যাবো তোমায় শ্বশুর বাড়ি নিয়ে’ ব্যান্ড (পার্টি) বাজানো হাস্যকর, বড়জোর বিরক্তিকর, কিন্তু ‘নিষ্ঠুর’! সিরিয়াসলি?”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, র‍্যাগ ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতার আলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ বিধি মোতাবেক এটির অনুমতি নেই৷ সেই মোতাবেক আজকের অ্যাকাডেমিক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ বাকিটা প্রসিডিং দেখে বলা যাবে৷