নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লায় শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) এশার নামাজের সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণে অন্তত অর্ধশত মুসল্লি দগ্ধ হন। এর মধ্যে সাত বছরের শিশু জুবায়েরসহ ৩৭ জনকে ভর্তি করা হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে মারা যায় জুবায়ের। তার ছোট্ট শরীরের ৯৫ ভাগই ঝলসে গিয়েছিল বিস্ফোরণে।
শিশু জুবায়েরের চাচা নাহিদ হাসান শাকিল জানান, জুবায়েরের বাবা জুলহাজ ও মা রহিমা খাতুন দুজনই গার্মেন্টকর্মী। পশ্চিম তল্লা মসজিদের পাশেই একটি বাসায় ভাড়া থাকেন তারা। জুলহাস মিয়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। সন্ধ্যায় গার্মেন্ট থেকে বাসায় ফিরে মাগরিব ও এশার নামাজ জামায়াতের সঙ্গে পড়েন। সঙ্গে নিয়ে যেতেন একমাত্র সন্তান জুবায়েরকে।
শাকিল বলেন, ‘শুক্রবার জুমার নামাজসহ অন্য ওয়াক্তের নামাজও বাবার সঙ্গে মসজিদে গিয়ে পড়েছে জুবায়ের। কিন্তু এশার নামাজের সময় সে যেতে চায়নি। হয়তো তার শিশু মনে কোনও অঘটন ঘটতে পারে বলে আগেই জানান দিয়েছিল। মা রহিমা সন্তানকে বুঝিয়ে মসজিদে পাঠিয়েছিলেন। আল্লাহর ঘর থেকেই সে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিল।’
তিনি আরও জানান, জুবায়েরের বাবা জুলহাজের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। শরীরের প্রায় পুরো অংশ ঝলসে গেছে। কথা বলতে পারছেন না। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। একই সঙ্গে ছয়টি এসি কেন বিস্ফোরিত হলো এবং এই বিস্ফোরণের সঙ্গে গ্যাস লিকেজ হওয়ার কোনও সংযোগ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পর তারা মসজিদে গ্যাস ডিটেক্টর দিয়ে ভেতরে প্রায় ৭০ ভাগ মিথেন গ্যাস থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। অন্যান্য সব বিষয় বিশ্লেষণ করে বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, বিস্ফোরণের পর খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের নারায়ণগঞ্জ স্টেশনের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনাসহ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতাল পাঠানোর ব্যবস্থা করে। বিস্ফোরণের কারণে মসজিদের ভেতরে থাকা সিলিং ফ্যানের পাখাগুলোও বাঁকা হয়ে গেছে। ভেতরে থাকা কয়েকটি প্লাস্টিকের চেয়ারও ভেঙে টুকরো হয়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের আরেকজন কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে এসি বিস্ফোরণ বলা হলেও এখানে গ্যাস পাইপ লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা রয়েছে। মসজিদের সামনে গ্যাসের লাইন লিকেজ এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে মসজিদের মেঝেতে পানি দেওয়ার পর বুদ্বুদ উঠতে দেখা গেছে। এসির কারণে দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় মসজিদের ভেতরে গ্যাস জমে থাকতে পারে। তদন্ত শেষে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
এদিকে বিস্ফোরণের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে ছুটে যান। খবর পেয়ে আলামত সংগ্রহ করেছেন সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। বিস্ফোরণের পর মসজিদে আহতদের স্বজনদের পাশাপাশি অসংখ্য উৎসুক মানুষকেও ভিড় করতে দেখা গেছে।
আরও খবর:
৭ বছরের জুবায়ের মারা গেছে, দগ্ধদের অবস্থা সংকটাপন্ন
নারায়ণগঞ্জে নামাজের সময় মসজিদে এসি বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৩৬