প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতির মামলায় একই কার্যালয়ের কর্মচারী ফাতেমা খাতুনের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার ( ২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ম্যাট্রেপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা তরিকুল ইসলাম মমিনসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন সম্প্রতি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে উল্লিখিত আসামিরা হলেন— ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি (বহিষ্কৃত) তরিকুল ইসলাম মমিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মচারী ফাতেমা খাতুন, নাজিম উদ্দীন, রুবেল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরহাদ হোসেন ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আব্দুস সালাম আজাদ। এদের মধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আব্দুস সালাম আজাদ পলাতক রয়েছেন। তাকে খুঁজছে পুলিশ।
তদন্ত কর্মকর্তা মামলার অভিযোগপত্রে ১১ জনকে সাক্ষী করেছেন এবং এম আবদুস সালামকে পলাতক দেখিয়েছেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ পদে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এনামুল হক, বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি সার সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
এই নথি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করার পর তিনি অধ্যাপক ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন। পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নথিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি পর্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমার কাছে ফাইল এলে তিনি এম আবদুস সালাম আজাদ অনুমোদন পাননি—গোপনীয় এ তথ্য ফোনে ছাত্রলীগ নেতা তরিকুলকে জানিয়ে দেন।
এরপর তরিকুলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১ মার্চ নথিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কৌশলে বের করে ৪ নম্বর গেটের সামনে আসামি ফরহাদের হাতে তুলে দেন ফাতেমা।
এ কাজের জন্য ফাতেমাকে আসামিরা ১০ হাজার করে বিকাশে মোট ২০ হাজার টাকা দেয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, এরপরেই সেই নথিতে আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া টিক চিহ্নটি ‘টেম্পারিং’ করে সেখানে ক্রস চিহ্ন দেয়। একইভাবে অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফের নামের পাশেও ক্রস চিহ্ন দিয়ে এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেয়। পরে আসামিরা গত ৩ মার্চ তারিখে নথিটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠায়। এসব ঘটনা নিয়ে ভাটারা এলাকার সানফ্লাওয়ার রেস্টুরেন্টে আসামি নাজিমের সঙ্গে তরিকুল ও ফরহাদ শলাপরামর্শ করে। তবে তাদের জালিয়াতিটি ধরা পড়ে যায়।
জালিয়াতির এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাদী হয়ে গত ৫ মে তরিকুল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমা ও ফরহাদ নামে তিন জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
মামলার পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নেতা তরিকুলকে ভোলা এবং আসামি ফরহাদকে নোয়াখালী থেকে গ্রেফতার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়াও আসামি ফাতেমা, রুবেল ও নাজিমকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা এখন কারাগারে। এ মামলার আসামি আব্দুস সালাম আজাদ পলাতক। আসামিদের মধ্যে তরিকুলসহ চার জন অভিযোগ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনার পর তরিকুলকে ছাত্রলীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।