বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, প্রথম ধাপে ২৮ জুন যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। ৬ জুলাই পর্যন্ত বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে বন্যার পানি। মোট ৯ দিন পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দ্বিতীয় ধাপে ১৩ জুলাই আবারও বিপদসীমা অতিক্রম করে পানি। ১৭ জুলাই ১৪ দশমিক ৩৬ মিটার পর্যন্ত তা অবস্থান করে। এরপর ৬ আগস্ট পর্যন্ত বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ কারণে ২৫ দিন পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুই দফায় মোট ৩৪ দিন বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এ বছর বন্যার শুরুর দিকেই স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশের সহযোগিতায় সিরাজগঞ্জের এনজিও মানব মুক্তি সংস্থা প্রথম পর্যায়ে বেলকুচি উপজেলার বড়ধুল ও বেলকুচি সদর ইউনিয়ন এবং চৌহালী উপজেলার স্থল, ঘোড়জান ও সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের মোট ১ হাজার ২৭টি পরিবারের মধ্যে ন্যাশনাল ওয়াশ ক্লাস্টারের নির্ধারিত হাইজিন প্যাকেজ এবং নগদ অর্থ বিতরণ করে। এছাড়া একটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা ৩২ পরিবারের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, নগদ অর্থ, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা, হাইজিন কিট, গবাদি পশুর খাবার, স্থানান্তরযোগ্য চুলা এবং ঈদ উপলক্ষে উন্নত খাবার নিশ্চিত করা হয়।
টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলার গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়নের মোট ৮০০ পরিবারের মধ্যে ন্যাশনাল ওয়াশ ক্লাস্টারের নির্ধারিত হাইজিন প্যাকেজ ও নগদ অর্থ সহায়তা বিতরণ করেছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এনডিপি) এবং স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশ। একই এলাকায় ৫০টি ক্ষতিগ্রস্ত নলকূপ মেরামত, ৮টি নলকূপ স্থাপন, ৬টি স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন স্থাপন এবং কোভিড-১৯ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাইকিং করা হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী ও বেলকুচি উপজেলায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আষাঢ়ের শুরুতেই নদীর পানি বাড়তে থাকে। বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় দেখা দেয় নদীভাঙন। তাতে বিলীন হয়ে যায় থাকার জায়গাটুকু। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও স্থানীয়দের স্বাস্থ্য সচেতনতা শেখাতে কাজ করছে মানব মুক্তি সংস্থা। ৩৬ বছর ধরে যমুনা নদীতীরবর্তী সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও পাবনা জেলার বিশেষ করে সিরাজগঞ্জের ভাঙনকবলিত এলাকায় কাজ করছে এই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। তারা অসহায় জনগোষ্ঠীর প্রতি মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়।
নাজমা বলতে থাকেন, ‘এখন আমাদের দরকার শুধু একটা উঁচু জমি, যেখানে আমরা ঘর কইরা থাকতে পারি। আমাদের যেন আর পানি আসলেই (বন্যা) অন্যখানে যাওয়ার কথা ভাবতে না হয়। এক জায়গায় থেকে গিয়া আরেক জায়গায় ঘর তোলার পেছনে আমাদের আয় সব চইলা যায়। থাকুম ক্যামনে? বাচুম ক্যামনে? এখানে আমরা এখন ভালোই আছি। এখান থেকে সরায় দিলে আমাদের দুর্দিন আবার শুরু হবে। জমিও নাই, ট্যাকা-পয়সাও নাই। এই জায়গা থেকে সরার লাইগ্যা আট দিন সময় দিসে। কিন্তু জায়গা তো পাই না থাকার কোথাও।’
মানব মুক্তি সংস্থার মানবিক সহায়তার কথা তুলে ধরে একই গ্রামের আকলিমা বলেন, ‘ওনারা আমাদের গরুর খাবার দিসে, টিউবওয়েল পাকা কইরা দিসে, বালতি, মগ, ১০টা সাবান, পাঁচ প্যাকেট গুঁড়া সাবান, স্যানিটারি প্যাড, তিন হাজার টাকা, ব্লিচিং পাউডার ও মাস্ক পাইসি। আমরা সবাই কিছু না কিছু সহায়তা পাইসি। এখন আল্লাহ আমাদের ভালোই রাখসে।’
তবে আকলিমা যোগ করেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের দরকার মাটি। মাটি দিয়ে আমরা টয়লেট উঁচু করতাম। তাছাড়া আরও টিউবওয়েল হইলে ভালো হইত। কামাই কইরা পেট চালামু নাকি প্রয়োজন মিটামু? এখন যে টয়লেট আছে কোনোরকম চলা যায় আর কী।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়– মানব মুক্তি সংস্থা মানবিক কাজের ধারাবাহিকতায় করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে হাইজিন সামগ্রীর প্যাকেজ, নগদ অর্থ, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন ও নারীদের জন্য আলাদা বাথরুমের (স্যানিটেশন ও ঋতুকালীন সুবিধাসহ) ব্যবস্থা করে থাকে। এছাড়া গো-খাদ্য, রান্নার চুলা, ঈদের আনন্দ সমভাগের লক্ষ্যে কোরবানির পশু এবং বন্যার সময় পানিবাহিত যেসব রোগ-বালাইয়ের আগমন ঘটে তা থেকে নিস্তার পেতে ধারাবাহিকভাবে অভিজ্ঞ মেডিক্যাল টিমের মাধ্যমে নিয়মিত পরামর্শ দেয় সংস্থাটি।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন