সেদিনের কথা মনে করে আঁতকে ওঠেন দগ্ধরা




দগ্ধ১ওইদিন রাতে নামাজ শেষে আমি ও আমার ভায়রা ইমাম হোসেন ইমরান মসজিদের ভেতরে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। পরে জুতা নিয়ে বের হওয়ার সময় আমার হাতে নোংরা লেগে যায়। হাত ধুতে যখন অজুখানায় যাই তখনই বিস্ফোরণ হয়। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি শরীরে আগুন লেগে গেছে। দৌড়ে বের হয়ে মানুষের কাছে পানি পানি বলে চিৎকার করতে থাকি। অনেকেই পানি দিয়েছেন। পরে পাশেই বাসায় ছুটে যাই, তখন বাসার লোকজন আমাকে প্রথমে ভিক্টোরিয়া এলাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাতেই শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। এভাবেই সেদিনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির বর্ণনা দেন নারায়ণগঞ্জের তল্লা এলাকায় মসজিদে বিস্ফোরণে দগ্ধদের একজন আমজাদ। কিন্তু সেদিনের কথা মনে করে বেঁচে যাওয়ারা এখনও ভয়ে আঁতকে ওঠেন।

মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দগ্ধ একজন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন কেনান (২৪) ও আমজাদ (৩৫)। তাদের আইসিইউ থেকে জেনারেল ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকি ৩৪ জন মারা গেছেন।

হাসপাতালে গিয়ে বিস্ফোরণে দগ্ধদের কাছে শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা অনেকটা সুস্থ বলে জানান। তবে চিকিৎসক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল বলছেন, দগ্ধ দু’জনই আস্তে আস্তে ভালো হচ্ছেন। তবে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।

আমজাদের বাবা আব্দুল আহাদ বলেন, এ ঘটনায় আমজাদের ভায়েরা ইমাম হোসেন ইমরান দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আমজাদ এখন অনেকটা ভালো আছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার শরীরের তার ২৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।

দগ্ধ আমজাদ হোসেন ফকির গার্মেন্টসের কাভার্ডভ্যান চালক ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জে। বর্তমানে পশ্চিম তল্লা এলাকায় থাকেন। আরিফা (৫) নামে এক কন্যাসন্তান রয়েছে, তার স্ত্রীর নাম তানজিলা আক্তার মৌটুসী।

এদিকে, দগ্ধ কেনানের ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, তিনি একটি চেয়ারে বসে আছেন। পাশে সেবা করছেন তার ফুফু খাদিজা বেগম। সঙ্গে ছিলেন ফুফাতো বোন। কেমন আছেন জানতে চাইলে বলেন, এখন অনেকটাই ভালো। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন সুস্থ হয়ে বাড়ি যেতে পারি।

ঘটনার কথা মনে হলে এখনও আঁতকে ওঠেন কেনান। তিনি কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। স্বজনেরা তাকে ঘটনাটি ভুলে যেতে বলেন। তিনি বলেন, যতই ভুলে থাকতে চাই কিন্তু পারি না।

দগ্ধ২কেনান বলেন, ঘটনার দিন রাতে নামাজ শেষে জুতা নেওয়ার সময় বিস্ফোরণ ঘটে। কোনও রকম সেখান থেকে বের হই। বের হওয়ার আগে দেখেছি, অনেকেই মসজিদে নামাজ পড়ছিল, কেউ কেউ মোনাজাত করছিল। এখনও ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠি, ঘুম ভেঙে যায়। মনে পড়ে যায় সেই দৃশ্যগুলো।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন,  কেনানের শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

কেনানের ফুফু খাদিজা বেগম বলেন, কেনান আমাদের বাসায় থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করতো। করোনার কারণে দুই-তিন মাস গ্রামের বাড়িতে ছিল। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লায় আমাদের (ফুফুর) বাসায় আসে। আবারও গার্মেন্টসে কাজ করার জন্য চাকরিও খুঁজছিল। ঘটনার সময় তার স্ত্রী খাদিজা ও সন্তান রাফি (২) গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাহেরচর উপজেলায় ছিল। তার ইচ্ছে ছিল চাকরি হলে তাদেরও এখানে নিয়ে আসবে। তার ছোট ভাই নারায়ণগঞ্জে থাকে।

উল্লেখ্য, বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩৭ জন দগ্ধ হয়েছেন। এরমধ্যে ৩৪ জনই বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। একজন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে চলে গেছেন। বর্তমানে দুই জন চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে বিস্ফোরণে হতাহত প্রত্যেক পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে পাঁচ লাখ টাকার বিশেষ অনুদান দেওয়া হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবারের মধ্যে এই সহায়তার চেক পরিবারগুলোতে পৌঁছানো হবে।