‘রোগাক্রান্ত’ হুইলচেয়ারেই কিডনি রোগীর সেবা

IMG_20201004_135105

কিডনি রোগের চিকিৎসায় প্রতিষ্ঠিত সরকারের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিস অ্যান্ড ইউরোলজি’ চলছে ‘রোগাক্রান্ত’ হুইলচেয়ারের ওপর ভরসা করে! হুইলচেয়ারের পা দানি ভেঙে যাওয়ায় দড়ি দিয়ে বানানো হয়েছে পা রাখার জায়গা। আর তা দিয়েই চলছে রোগীদের সেবা। এ নিয়ে রোগীদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। সরেজমিনে ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগের সামনের রাস্তা কর্দমাক্ত ও পানিতে সয়লাব। বহির্বিভাগের পেছনে জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনও ব্যবহার করার মতো হুইলচেয়ার কিংবা স্ট্রেচার নেই।  বহির্বিভাগটি মূল বিল্ডিংয়ের নিচ তলায়। ভেতরের দিকে হাতে গোনা কয়েকটি হুইলচেয়ার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও রোগীকে হুইলচেয়ারে করে ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রবেশ পথের মুখে র‍্যাম্প নেই।  যেদিকে র‍্যাম্প আছে সেদিকের গেট বন্ধ রয়েছে। তাই বাইরে থেকে আসা রোগীকে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নিচ তলার ফ্লোরে উঠে হুইলচেয়ারে বসতে হয়। আর র‍্যাম্প দিয়ে উঠতে হলে ব্যবহার করতে হয় জরুরি বিভাগের গেট।

সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, নিচ তলায় দুই থেকে তিনটি হুইলচেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে দুটি হুইলচেয়ারের পা দানি ভাঙা। কোনোরকম পা রাখার জন্য সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে রশি। রশি দিয়ে দুই পাশ থেকে টেনে ব্যবস্থা করা হয়েছে পা রাখার জন্য।  অসুস্থ রোগীরা নিরুপায় হয়ে সেটিতে বসেই হাসপাতালের সেবা নিচ্ছেন।

 

IMG_20201004_135059

এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা  কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের ক্ষোভের কথা। সালাহউদ্দিন তার ভাইকে নিয়ে এসেছেন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে। তার ভাই গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল। হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে নেমে ডানে-বামে অনেকক্ষণ ধরে কাউকে খুঁজলেন হুইলচেয়ারের জন্য। কিন্তু পাচ্ছিলেন না। সেখানে অবস্থানরত একজনকে জিজ্ঞেস করলেন কোথায় পাওয়া যাবে হুইলচেয়ার। জবাবে ওই লোক ভেতরের দিকে আঙুলের ইশারা করেন। কিন্তু ভেতরে গিয়েও হুইলচেয়ার পাননি সালাহউদ্দিন। পরে বহির্বিভাগের বাম পাশের  কক্ষে একটি ভাঙা হুইলচেয়ার দেখতে পান।  পা রাখার জায়গা দড়ি দিয়ে বাঁধা। নিরুপায় হয়ে তিনি সেটিই নিয়ে আসলেন ভাইয়ের জন্য। সেই হুইলচেয়ারে ভাইকে বসিয়ে তার পা দুটি কোনোরকমে রাখলেন দড়ির ওপরে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সব জায়গায় সরকারি হাসপাতালের একই অবস্থা। কোনও মানসম্মত সেবা পাওয়া যায় না। খরচ কম হওয়ায় আমাদের মতো মানুষরা আসে সরকারি হাসপাতালে। একটা হুইলচেয়ারের জন্য আমার কয়েকবার ঘুরতে হলো। তাও যেটা পেলাম সেটা ভাঙা। অন্যদের কথা একবার চিন্তা করেন।  হাসপাতালে যেসব রোগী ভর্তি  আছেন, তারা কীভাবে চলাফেরা করেন।’

IMG_20201004_135304

একই অভিযোগ, নারী উদ্যোক্তা ও ফ্যাশন ডিজাইনার তানিয়া তাসলিমার। তিনি বলেন, ‘আব্বুর ইউরিন আউটপুট হচ্ছিল না প্রায় ৭২ ঘণ্টা। যথারীতি তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে।  ঢাকার মোটামুটি সব প্রাইভেট হাসপাতাল ঘুরে শুক্রবার কোনও ডাক্তার না থাকায়, সরকারি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে ডাক্তার পেলাম। হুইলচেয়ারও আসলো, কিন্তু সেটা ঐতিহাসিক হুইলচেয়ার! চিকিৎসা পাওয়া আমাদের অধিকার, সেটা পেয়েই নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। স্টাফদের ব্যবহারের কথা নাইবা বললাম। দেশের মন্ত্রীদের এই হুইলচেয়ারে ইমার্জেন্সিতে নেওয়া হোক।’

তানিয়া তাসলিমা কিডনি হাসপাতালের হুইলচেয়ারের একটি ছবি তার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেছেন। তাতে দেখা যায়, হুইলচেয়ারে পা রাখার জায়গা নেই। পা রাখার জন্য দড়ি দিয়ে দুই পাশ থেকে বেঁধে একটি স্তর তৈরি করা হয়েছে।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. নুরুল হুদা লেলিনকে পাওয়া যায়নি। তার সহকারী জানান, এই মুহূর্তে পরিচালকের পদে কেউ নেই। আগে যিনি ছিলেন, তাকে বদলি করা হয়েছে। বর্তমানে পরিচালকের পদ খালি আছে। পরিচালকের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তাকেও পাওয়া যায়নি।