ধর্ষণ মামলায় সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারার বিলোপ চান শিক্ষার্থীরা

সংবাদ সম্মেলনে দাবি তুলে ধরছেন শিক্ষার্থীরাসাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারার বিলোপ চেয়েছেন রাজধানীর বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করেছেন, এই ধারা অনুযায়ী মামলার জেরার সময় ধর্ষণের শিকার নারী পুনরায় হেনস্তার শিকার হন, যা বন্ধ করতে হবে। রবিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেশের নামিদামি কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই দাবি জানান।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানহা তানজিন লিখিত সাত দফা দাবি তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী চৌধুরী নদী ও তাসফিয়া তারান্নাম রিদিতা, গভ. ল্যাবরেটরি কলেজের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহিন আহমেদ এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাদিয়া আরাফাত সুচিতাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থী তানহা তানজিন এই সাত দফা দাবি তুলে ধরেন:

১. ধর্ষণ আইন পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে ধর্ষকের এবং সীমাভেদে সব ধরনের যৌন হয়রানির সর্বোচ্চ শাস্তি আমৃত্যু কারাদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।ভিকটিমের প্রাণ বিপন্ন করা রুখতে পরিবর্তনযোগ্য লঘু শাস্তির উল্লেখ থাকতে হবে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৭৫ ধারা অনুসারে উল্লিখিত ধর্ষণের সম্মতির সংজ্ঞা সংশোধন করতে হবে। যাতে ধর্ষণের শিকার হওয়া ছেলে শিশু, পুরুষ, যৌনকর্মী, লিঙ্গ  বৈচিত্র্যময় মানুষ এবং হিজড়ারাও যেন আইনের শরণাপন্ন হতে পারেন।

পাহাড়-সমতলে সব ধরনের যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও সামাজিক নিপীড়নের অভিযোগের নিরপেক্ষ বিচার করতে হবে। বৈবাহিক ধর্ষণকে ধর্ষণের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।

২. ধর্ষণজনিত ঘটনা বা অপরাধের জন্য আলাদা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে। যাতে ৩০-৬০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা যায়। এতে ‍পূর্ববর্তী সব ধর্ষণ মামলার রায় আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি সম্পন্ন করতে হবে।

৩. সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারার বিলোপ করতে হবে। এই ধারায় জেরা করার সময় যাতে ধর্ষণের শিকার নারীকে চরিত্র, পেশা, পোশাক ইত্যাদি নিয়ে পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারকের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে না হয়। প্রয়োজনে এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীদের মামলা পরিচালনাকালে লিঙ্গীয় সংবেদনশীল আচরণ করতে পুলিশ, আইনজীবী, বিচারক ও  সমাজকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. নির্যাতণের শিকার হওয়ার পর পরিবারের ওপর কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির চাপপ্রয়োগ বা ধর্ষককে আশ্রয় প্রদানকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. দেশের প্রতিটি মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌনশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।  পাঠ্যপুস্তক ও মিডিয়াতে এবং সাহিত্য, টিভি নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন ও নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে।

৬. সাইবার মাধ্যমকে ব্যবহার করে নারীর প্রতি সর্ব প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে অতিদ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

৭. ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রতিটি উপজেলায় মেডিক্যাল টিম গঠন করতে হবে, যারা স্থানীয় প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে অবকাঠামোর কাছে  জবাবদিহি করবে। দেশের সব প্রান্তে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের এসব দাবি মেনে নিয়ে যথাযথ আইন প্রণয়ন করে। দাবি মানা না হলে পরবর্তী সময়ে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা  করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তানহা তানজিন বলেন, ‘একজনকে ফাঁসি দিলেই কি এদেশে ধর্ষণ বন্ধ হবে? বন্ধ হবে না। বরং এতে ধর্ষক মনে করবে, আমার তো ফাঁসি হয়ে যাবে, তাই মেরেই ফেলি। এতে হিতে বিপরীত হবে। তাই আমরা আমৃত্যু কারাদণ্ড চাই।’