সেনা কর্মকর্তা কর্নেল দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা এখনও সিএমএইচে চিকিৎসাধীন আছেন। তার স্ত্রী মোসলেহা মুনীরা রাজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অসুস্থ অবস্থায় সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ তাকে পদোন্নতি দিয়ে যে বিরল সম্মান দিয়েছে, তার জন্য তিনি চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন। দেওয়ান রাজা ও মুনীরা রাজার তিন সন্তান। দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মোসলেহা মুনীরা রাজা বলেন, ‘তার স্বামী চাইতেন তাদের দুই ছেলে বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। সন্তানরাও নিয়োজিত হবে দেশের সেবায়। কিন্তু স্বামীর অসুস্থতার পর সবকিছু পাল্টে যায়। তারপরও তারা তাদের বাবার আদর্শেই বড় হতে চায়।’ তিনি এখনও আশা করেন, একদিন তার স্বামী সুস্থ হয়ে উঠবেন। ফিরে পাবেন স্বাভাবিক জীবন।
মোসলেহা মুনীরা রাজা আরও জানান, ২০১৩ সালের ১১ মার্চ হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হন চৌকস সেনা কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা। এরপর মস্তিষ্কের কিছু অংশ হারিয়ে ফেলে কার্যক্ষমতা। চলে যান কোমায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে হাইপোস্কিক স্কিমিক ইনজুরি টু ব্রেইন ইফেক্টস। এ অবস্থাতেই কেটে গেছে জীবনের আটটি বছর। পুরো সময় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) অফিসার্স ওয়ার্ডের নন্দকুঁজা নামের একটি কক্ষে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। হাত-পা নাড়াতে পারলেও গভীর কোমায় আচ্ছন্ন। দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর পর অবসর দেওয়ার আগে তাকে কর্নেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। হাসপাতালের বিছানাতেই তাকে পরানো হয় ব্যাচ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে এই প্রথম কোমায় থাকা একজন অসুস্থ সেনা কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে অবসরে পাঠানো হয়। অবসর দেওয়া হলেও তিনি আমৃত্যু চিকিৎসাধীন থাকবেন সিএমএইচে।
কর্নেল দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজার জন্ম ১৯৬৭ সালের ১৫ অক্টোবর। তিনি সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে এসএসসি, ১৯৮৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৮৯ সালের ২৩ জুন সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া বাহিনীতে কমিশন পান। ওই বছরই চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি (বিএমএ) থেকে বিএসসি পাস করেন। প্রায় ৩২ বছরের চাকরি জীবনে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও কাজ করেন। শান্তিরক্ষা মিশনে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন পিস মেডেল। এছাড়া সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ স্কুলের রণকৌশল প্রশিক্ষক ছিলেন। তিনি মরমী কবি হাছন রাজার প্রপৌত্র।