আদালতে সম্রাটের আইনজীবী

তিনি তো সাহেদ না, তিনি ছিলেন যুবলীগের নেতা

আদালতে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট

যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ক্যাসিনো সম্রাট খ্যাত ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে নির্দোষ দাবি করেছেন তার আইনজীবী মাহবুবুল আলম দুলাল। করোনা পরীক্ষায় দু্র্নীতি ও প্রতারণায় অভিযুক্ত রিজেন্ট হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী সাহেদের মতো সম্রাট অপরাধী নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিনি তো সাহেদ না, তিনি ছিলেন যুবলীগের নেতা। রাজনৈতিক কারণে সম্রাটকে আজ বলির পাঁঠা হতে হয়েছে। সম্রাট নির্দোষ, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। যেকোনও শর্তে তার জামিন চাচ্ছি।’ মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে তিনি জামিন শুনানিতে এ কথা বলেন।

এ সময় সম্রাটের আইনজীবী আরও বলেন, ‘আগে তাকে বাঁচতে দিন। তারপর বিচার করুন। সম্রাট একজন হার্টের রোগী। ১৯৯৯ সালে ভারতের দেবী শেঠির অধীনে তার হার্টের সার্জারি হয়। এরকম একটা মানুষকে মাদক মামলা দেওয়া হয়। তিনি নাকি মাদক সেবনকারী। একটা মানুষকে যতটা ভিকটিমাইজ করা যায় সেভাবে তাকে ভিকটিমাইজ করা হয়েছে।’

এদিন সকাল ১০টায় সম্রাটকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাকে আদালতের হাজতখানা রাখা হয়। এরপর আজ বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বিচারকের নির্দেশে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। এরপর ১১টা ২৫ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুতেই বিচারক মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ছাড়া সবাইকে আদালতের এজলাস ত্যাগ করতে বলেন। সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ছাড়া বাকি আইনজীবীরা আদালতের এজলাস ত্যাগ না করে বিচারককে লক্ষ্য করে বলেন, ‘আমরা তো সিনিয়র আইনজীবীদের অ্যাসোসিয়েট। ওকালতনামায় নাম না থাকলেও শুনানিতে অংশগ্রহণ করা যায়।’

আদালত প্রাঙ্গণে সম্রাটের সমর্থকদের ভিড়তখন বিচারক মামলার নথি দেখে যারা সংশ্লিষ্ট আইনজীবী তাদের শুনানি করতে বললে একপর্যায়ে আইনজীবী এবং বিচারকের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হতে দেখা যায়। এ সময় আইনজীবীরা বলেন, ‘আদালতে সিনিয়র আইনজীবীদের শুনানি করতে মামলার নথিতে ওকালতনামা প্রয়োজন হয় না।’ তখন বিচারক বলেন, ‘যেহেতু করোনাসহ সার্বিক পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ, সে কারণে আপনাদেরকে বাইরে যেতে বলছি।’ এর কিছুক্ষণ পরেই পরিবেশ শান্ত হয়। সম্রাটের আইনজীবী মাহবুবুল আলম দুলাল জামিন শুনানি শুরু করে সম্রাটকে হার্টের রোগী উল্লেখ করে তার জামিন চান।

শুনানিতে তিনি বলেন, ‘আদালত আপনি নিজেই তাকে চিকিৎসার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন। পত্র-পত্রিকার লেখালেখির কারণে তাকে আবার হাসপাতাল থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তার কিডনি নষ্ট, হার্ট নষ্ট। স্যার তাকে জামিন দিন।’

এরপর শুনানি শেষ হয় ১২টা ৫ মিনিটে। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এরপর তাকে কঠোর নিরাপত্তায় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ তার চার্জশিট আমলে নিয়ে চার্জ গঠনের জন্য ৩০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

গত ৬ নভেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলার চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১-এর উপপরিদর্শক (এসআই) শেখর চন্দ্র মল্লিক। গত ৯ ডিসেম্বর মাদক মামলায় সম্রাট ও আরমানের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১-এর এসআই আবদুল হালিম।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৬ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে তাকে নিয়ে ওইদিন দুপুর দেড়টার দিকে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। এ সময় কার্যালয়ের ভেতর থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও পিস্তল উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় ৭ অক্টোবর র‌্যাব-১-এর ডিএডি আব্দুল খালেক বাদী হয়ে রমনা থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন।

 আরও খবর: সম্রাটের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র মামলায় চার্জ গঠনের দিন ধার্য