কন্টেইনারে ময়লা ফেললে জরিমানা!

বিজ্ঞপ্তি

সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত কন্টেইনারে কেউ ময়লা ফেললে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এমন ব্যানার লাগিয়ে কন্টেইনারে ময়লা ফেলতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নিযুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এসএম সেলিম এন্টারপ্রাইজ নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ সিটির ১৭নং ওয়ার্ডের ময়লা সংগ্রহের কাজ পেয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, আইন অনুযায়ী করপোরেশন নির্ধারিত স্থানে ময়লা নিজ দায়িত্বে ফেলছেন। এতে কেউ বাধা দেওয়ার অধিকার রাখে না।

সরেজমিন দেখা গেছে, ডিএসসিসির ১৭নং ওয়ার্ডের সোবহানবাগ ৬তলা কলোনির ১৫ নম্বর বিল্ডিংয়ের পাশে করপোরেশন নির্ধারিত ময়লা ফেলার জায়গা রয়েছে। কিন্তু তাতে সেলিম এন্টারপ্রাইজ ব্যানার লাগিয়ে ‘বিশেষ বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে−‘এখানে বাসা/বাড়ির ময়লা ফেলা সম্পূর্ণ নিষেধ। এই কন্টেইনারটি ডিএসসিসি থেকে এসএম সেলিম এন্টারপ্রাইজ লিজ প্রাপ্ত। এখানে ময়লা ফেলতে দেখা গেলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা।’ আদেশক্রমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। পরিচালনায় এসএম সেলিম এন্টারপ্রাইজ।

সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, করপোরেশন নগরীর বিভিন্ন স্থানে ময়লা ফেলার পাত্র বা অন্য কোনও আধারের  ব্যবস্থা করবে। যেখানে অনুরূপ ময়লা ফেলার পাত্র বা আধারের ব্যবস্থা করা হবে। করপোরেশন সাধারণ নোটিশ দিয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর ও জায়গা-জমির দখলদারদেরকে তাদের ময়লা বা আবর্জনা উক্ত পাত্র বা আধারে ফেলার জন্য নির্দেশ দিতে পারবে।’ 

আইন অনুযায়ী, করপোরেশন নির্ধারিত স্থান থেকে ময়লা সংগ্রহ করে ভাগাড়ে নিয়ে যাবে। আর নাগরিকরা বর্জ্য করপোরেশনের নির্ধারিত বিনে পৌঁছে দেবে।

এ বিষয়ে এমএস সেলিম এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুর রহমান শিমুলকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মী জানান, বছরে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ডিএসসিসি থেকে ময়লা সংগ্রহের জন্য তারা ইজারা নিয়েছেন। এজন্য প্রতি হোল্ডিং থেকে ১০০ টাকা করে তারা নিচ্ছেন। কিন্তু নাগরিকদের অনেকেই তাদের সেবা না নিয়ে নিজেরাই সরাসরি ময়লা কন্টেইনারে ফেলছে। এতে তাদের আয়ের পরিধি কমছে। কারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা ও আনুষঙ্গিক খরচ বাদে বছর শেষে তাদেরকে ১২ লাখ টাকা করপোরেশনের তহবিলে জমা দিতে হয়। আর সিটি করপোরেশন বলছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে তারা প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে পিসিএসপি নিয়োগ দিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৪০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। এটাই ময়লা ফেলার জন্য সিটি করপোরেশন নির্ধারিত স্থান। আমরা আশপাশের বাসিন্দারা এখানে এসে ময়লা ফেলতাম। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে এতে ময়লা ফেলতে দিচ্ছে না বর্জ্য সংগ্রহকারীরা। তারা ব্যানার লাগিয়ে দিয়েছে। এরাই আবার প্রতি বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে প্রতিমাসে ১০০-১৫০ টাকা করে নিচ্ছে। তাদের দাবি তারা নাকি ময়লার কন্টেইনার ইজারা নিয়েছে। সিটি করপোরেশনের কাছে আমার প্রশ্ন, আমার ময়লা যদি আমি নিজ দায়িত্ব তাদের কন্টেইনারে পৌঁছে দেই তাহলে কেন আমাকে টাকা দিতে হবে?’

তিনি আরও বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতি হোল্ডিং থেকে মাসে ১০০ টাকা করে আদায় করছে। কিন্তু ময়লা সংগ্রহ করার সময় অনেক হোল্ডিংয়ের বাসিন্দা বাসায় থাকেন না। অফিস বা কাজের তাগিদে বাইরে থাকেন। তারা রাতে এসে যখন নিজ দায়িত্বে ময়লা ফেলতে যান তখনও বাধা দেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ফজলে রাব্বি বলেন, ‘কেবল ওদের টাকা দিয়ে নির্দিষ্ট সময় ভ্যানে ময়লা ফেলতে হবে। ওই ডাস্টবিনের আশপাশের বাসাবাড়ির লোকেরা সেখানে ময়লা ফেলতে গেলে রীতিমতো দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। যারা দিনে বাসায় থাকে না তারাও নিজ দায়িত্বে রাতে ময়লা ফেলতে পারছে না। দিনে ভ্যানে ময়লা ফেলার সুযোগ না থাকলেও তারা টাকা দিয়েছে যেন রাতে ময়লা ফেলতে পারে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। তারা নাকি ১২ লাখ টাকা দিয়ে এটি সিটি করপোরেশন থেকে লিজ নিয়েছে।’

জানতে চাইলে ডিএসসিসি’র মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্যই প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে পিসিএসপি নিয়োগ দিয়েছি। এজন্য নীতিমালা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। করপোরেশন থেকে আমরা যেসব পিসিএসপিকে নিবন্ধন দিয়েছি তাদেরকে সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উল্লিখিত ব্যানারটিতে ‘লিজ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। করপোরেশন থেকে কাউকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ লিজ দেওয়া হয়নি। ডিএসসিসির যেকোনও নাগরিক করপোরেশনের যেকোনও এসটিএস বা করপোরেশন নির্ধারিত কনটেইনারে ময়লা ফেলতে পারবে। সেক্ষেত্রে বাধা দেওয়া পিসিএসপি নিবন্ধন শর্তের লঙ্ঘন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। এটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’