ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ হত্যা মামলায় স্ত্রীসহ ৪ জনকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদ, ছবি: সংগৃহীতরাজধানীর কাঁঠালবাগানে একটি ভবনের ৯ তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদ। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি তার স্ত্রী সাবরিনা শহীদ নিশিতাসহ চার জনকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে তাদেরকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দায়রা জজ আদালতকে তাদের জামিন আবেদনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন— আসিফ ইমতিয়াজের শ্বশুর এএসএম শহিদুল্লাহ মজুমদার, শাশুড়ি রাশেদা শহীদ ও শ্যালক সায়মান শহীদ নিশাত।

আসামিদের আগাম জামিন চেয়ে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (২১ অক্টোবর) বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও  বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আবদুর রাফেল। আসিফের পিতা শহীদুল ইসলাম খানও শুনানি করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. ওজি উল্লাহ।

উল্লেখ্য,গত ১১ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কলাবাগান থানাধীন কাঁঠালবাগান ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ১৬৩ নম্বর বাসার বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়েন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শহিদুল ইসলামের ছেলে ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদ। তার বয়স আনুমানিক ৩৩ বছর। পরে এটি আত্মহত্যা না হত্যা এ নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, সাবরিনা শহীদ নিশিতাকে প্রেম করে বিয়ে করেন আসিফ। এই বিয়ে মেনে নেয়নি আসিফের পরিবার। এ কারণে তার পরিবার মিরপুরে থাকলেও আসিফ  স্ত্রীকে নিয়ে কাঁঠালবাগানে শ্বশুর বাড়িতেই থাকতেন ।

এদিকে ঘটনার দিন আসিফের শ্যালক সায়মান নিশাদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আসিফ ও সাবরিনা মাঝেমধ্যে পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া করতেন। আসিফ মাদকাসক্ত ছিলেন। চার মাস উত্তরায় একটি রিহ্যাবেও ছিলেন তিনি। ঘটনার দিন রাতেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে আসিফ ৯ তলার বারান্দা থেকে লাফিয়ে নিচে পড়েন। পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় আসিফকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

অপরদিকে আসিফের বাবা শহিদুল ইসলাম জানান, আসিফ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। মতিঝিলে দেশ ট্রেডিং করপোরেশনের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ছিলেন। তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন ভোরে খবর দেয় যে, আসিফের অবস্থা ভালো না। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে এখানে গিয়ে আসিফকে মৃত দেখতে পাই।

পরবর্তীতে ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা, ইমতিয়াজের সুরতহাল রিপোর্ট ও আসামিদের আচরণে বাদী বুঝতে পেরেছেন, আসিফ লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেননি বরং তাকে হত্যা করে ওপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তাই দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় নিহত আসিফের বাবা বাদী হয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর কলাবাগান থানায় মামলা দায়ের করেন।

প্রসঙ্গত, ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদ সিরাজগঞ্জ কামারখন্দ বাগবাড়ী এলাকার অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম খানের ছেলে। শহিদুল ইসলাম ১৯৮৬-৯০ মেয়াদে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি কামারখন্দ) আসনের এমপি ছিলেন। আসিফ ব্যারিস্টারি পাস করে সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস করে আসছিলেন।