হাজি সেলিমের দখল থেকে জমি উদ্ধার করলো অগ্রণী ব্যাংক

অগ্রণী ব্যাংক

সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের দখল থেকে প্রায় ২০ শতক জমি উদ্ধার করেছে অগ্রণী ব্যাংক। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে অগ্রণী ব্যাংকের করপোরেট শাখার মালিকানাধীন এই জমি ১০ বছর ধরে দখল করে রেখেছিলেন হাজি সেলিম।

মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা জমি উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। কিন্তু হাজি সেলিমের লোকজনের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। তবে হাজি সেলিমের ছেলে গ্রেফতার হওয়ার পর অগ্রণী ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মীরা ব্যাংকের নিজস্ব জমি উদ্ধার করেছেন। সোমবার (২৬ অক্টোবর) শ্রমিক নিয়োগ করে নিজেদের ওই জমি দখলে আনা হয়।’  তিনি বলেন, ‘আমি যতদূর শুনেছি, হাজি সেলিম তার স্ত্রী গুলশান আরার নামে জাল দলিল বানিয়ে সরকারি এই জমি দখল করে নিয়েছিলেন। জমিতে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের দোতলা ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।’

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রশাসনের সহায়তায় সরকারি এই জমি উদ্ধার করা গেছে।’

প্রসঙ্গত, ১০ বছর পর জমিটি অবৈধ দখলমুক্ত করে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এর আগে অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষ থেকে জমি উদ্ধারে চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পাশাপাশি র‍্যাব-৩-এর টিকাটুলী কার্যালয়ে আবেদন করা হয়। এ নিয়ে ঢাকার যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে মামলাও করা হয়েছে। চলতি বছরের ২০ মে জিডি ও র‍্যাবের কাছে আবেদন করেন অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের মৌলভীবাজার করপোরেট শাখার প্রধান সহকারী মহাব্যবস্থাপক বৈষ্ণব দাস মণ্ডল। ওই আবেদনে বলা হয়, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দেশের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক। ১৯৪৭ সালের তৎকালীন হাবিব ব্যাংক, যা ১৯৭২ সাল থেকে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড মৌলভীবাজার করপোরেট শাখা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি বর্তমান ব্যাংকের গুদামঘর ও লকার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও অর্থসম্পদ সংরক্ষিত আছে। চকবাজারের বড় কাটরার বাসিন্দা হাজি মো. সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা সেলিমসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন ৭৮/১, মৌলভীবাজারের মালিকানা দাবি করে অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করছেন এবং রাতের বেলা ভবনের প্রাচীর ভেঙে ভেতরে ঢোকার পাঁয়তারা করছেন। শুধু তাই নয়, তারা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছেন, যা রাষ্ট্রমালিকানাধীন তথা অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের গোডাউন ও লকারে থাকা সম্পদের নিরাপত্তা জন্য হুমকিস্বরূপ। গুলশান আরা সেলিম ও স্বামী হাজি সেলিমের লোকজন ৭৩ বছর ব্যাংকের দখলে থাকা রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল করে সেখানে স্থাপনা তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে জেলা যুগ্ম জজ আদালতে মামলা বিচারাধীন।

উল্লেখ্য, গত রবিবার (২৫ অক্টোবর) রাতে স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহম্মেদ খান। এ সময় একটি গাড়ি তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। ওই গাড়িতে ছিলেন হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান এবং তার লোকজন। ওয়াসিফ নিজের পরিচয় দিয়ে গাড়িটিকে থামতে ইশারা করেন এবং কথা বলতে চান। তখন গাড়ি থেকে নেমে ওয়াসিফকে বেদম মারধর করে রক্তাক্ত করেন ইরফান ও তার লোকেরা। পরে সোমবার (২৫ অক্টোবর) সকালে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন ওয়াসিফ। এরপর শুরু হয় পুলিশ ও র‍্যাবের তৎপরতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হাজি সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে তল্লাশি চালায়। তার ছেলে ইরফান ও গাড়িচালক মিজানুরকে গ্রেফতার করে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পদ থেকে মোহাম্মদ ইরফান সেলিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।