সূত্র জানায়, সড়কে সৌর বাতি লাগানোর কিছু দিন যেতে না যেতেই প্রয়োজনীয় আলো দেওয়া বন্ধ করে দেয় সৌরবাতি। ফলে পর্যাপ্ত আলো না পাওয়ায় রাতের বেলায় রাস্তা অন্ধকারই থাকতো। তাতে ছিনতাই চাঁদাবাজি ও দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটতো। পরবর্তীতে ডিএসসিসি তার পুরো এলাকায় এলইডি বাতি লাগানোর প্রকল্প হাতে নিলে সেখান থেকে প্রকল্প এলাকায় নতুন করে এলইডি লাগিয়ে দেওয়া হয়। তবে আগের সৌরবাতির বাতিগুলো খুলে নেওয়া হলেও সেখানে পৌর প্যানেল ও মাটির নিচে থাকা মূল্যবান ব্যাটারি এবং কন্ট্রোলারসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ অপসারণ করা হয়নি। এজন্য সংস্থার বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে অনুমোদনের জন্য একটি ফাইল মেয়র দফতরে পাঠানো হয়। কিন্তু তা আজও অনুমোদন পায়নি। তবে প্রকল্পের মাধ্যমে সৌর প্যানেলগুলো সড়কে স্থাপন করায় সেখান থেকে খুলে নিয়ে তা অন্যকাজে ব্যবহারে জটিলতা দেখছে সংস্থাটির শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তারা। এজন্য ফাইলটি অনুমোদন করা হচ্ছে না বলে ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কাকরাইল মোড থেকে পল্টন হয়ে নটরডেম পর্যন্ত সড়কে পোলগুলোর ওপরে এখনও রয়েছে সৌর প্যানেল। তবে প্যানেলগুলোর মধ্যে পুরানো বাতিগুলো খুলে নিয়ে নতুন করে এলইডি বাতি লাগিয়ে দেওয়া হবে। কোথাও কোথাও প্যানেলগুলো হেলে পড়তেও দেখা গেছে।
পল্টন এলাকার দোকানদার সেলিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগে এই এলাকাটিতে সৌর বাতি ছিলো। তখন রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো থাকতো না। সন্ধ্যার পর ছিনতাই দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য অপরাধ ঘটতো। সম্প্রতি এলইডি বাতি লাগানোর কারণে এখন অন্ধকার দূর হয়েছে। তবে আগের প্রকল্পের মাধ্যমে লাগানো প্যানেলগুলো খুলে না নেওয়ায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) জাফর আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রকল্পের বাতিগুলো ভালো আলো না দেওয়ায় সেখানে পুরাতো বাতিগুলো খুলে নতুন করে এলইডি বাতি লাগানো হয়েছে। তবে সৌর প্যানেল, মাটির নিচে থাকা ব্যাটারি, কন্ট্রোলারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র এখনও রয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে তাহলে সেগুলো খুলে নিতে পারে।’
সিটি কপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্যানেলগুলো খুলে নিয়ে সিটি করপোরেশন অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারে। এতে করপোরেশনের কিছুটা হলেও বিদ্যুৎ খরচ কমবে। করপোরেশন যদি অতি অল্প সময়ের মধ্যে কাজটি না করে তাহলে কোটি টাকা মূল্যের এসব প্যানেল বিকল হয়ে পড়বে। তবে এরই মধ্যে ব্যাটারিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিকল হয়ে পড়ার আশঙ্কাও করেছেন তারা।
সূত্র জানায়, পরীক্ষামূলক বাস্তবায়িত কাকরাইল-নটরডেম কলেজ প্রকল্পে ৬১টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়। প্রতিটি পোস্টের ওপর বসানো সাড়ে ৫ ফুট আয়তনের এক জোড়া সোলার প্যানেল। ৬১ পোলে মোট ১২২টি বাতির এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তবে দরপত্রে সর্বনিম্ন ২ কোটি ২৪ লাখ ২১ হাজার ৬৫০ টাকার দরদাতা পাওয়ায় পুরো টাকার আর প্রয়োজন হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রকল্পে বরাদ্দের অর্ধেক টাকায় দরপত্র পাওয়ায় নিম্নমানের জিনিসপত্র দিয়ে কাজ শেষ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্যানেলের বাতিগুলো ছিল মাত্র ৬০ ওয়াটের। অথচ এই সড়কে আগের সোডিয়াম বাতিগুলো ছিল ১৫০ ওয়াটের।
প্রকল্পে বলা হয়, সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সূর্যের আলো সংরক্ষণ করে রাজধানীর সড়কে বাতিগুলো জ্বলবে। এতে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে না। পরিবেশবান্ধব এ প্রকল্পটি নগরীর সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি করপোরেশনের খরচও কমাবে। কিন্তু প্রকল্পটি স্থাপনের পর থেকেই বাতিগুলোতে স্বল্প আলো, বারবার নষ্ট হওয়া, সামান্য ঝড়ে পোলগুলো ভেঙে পড়া, সৌর প্যানেলে ময়লা জমে থাকাসহ নানা ত্রুটি ধরা পড়ে।