করোনায় দেশে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন পাঁচ হাজার ৮৩৮ জন এবং শনাক্ত হয়েছেন চার লাখেরও বেশি। ৪৩তম সপ্তাহে গড়ে মারা গেছেন ১৯ জন এবং গড়ে শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৪৬০ জন। প্রতি ১০০ নমুনা পরীক্ষায় দেশে এখন ১০ জন করে শনাক্ত হচ্ছেন। গত ৭ মে দেশের বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্রমান্বয়ে চালু করার সুবিধার্থে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও পেশার জন্য একটি কারিগরি নির্দেশনা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে তৈরি করা এই গাইডলাইনে ৪৭টি ক্যাটাগরিতে আলাদা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে– খোলার আগে মহামারি-বিরোধী সামগ্রী যেমন মাস্ক, জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রী ইত্যাদি সংগ্রহ করুন। আপদকালীন পরিকল্পনা তৈরি করুন। আপদকালীন সংক্রমিত বস্তুর ডিসপোজাল এলাকা স্থাপন করুন। সব ইউনিটের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ জোরদার করুন। কর্মীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করুন। প্রতিদিন কর্মীদের স্বাস্থ্যবিষয়ক অবস্থা নথিভুক্ত করুন এবং যারা অসুস্থতা অনুভব করবেন, তাদের সঠিক সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। রেস্তোরাঁর প্রবেশ পথে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণের সরঞ্জাম স্থাপন করতে হবে এবং কেবলমাত্র সাধারণ তাপমাত্রার ব্যক্তিদেরই প্রবেশ করতে দিতে হবে।
কিন্তু রবীন্দ্র সরোবরে এমন কিছুই নেই। সোমবার (২৭ অক্টোবর) সেখানে গিয়ে দেখা যায় অবাধে মাস্ক ছাড়াই প্রবেশ করছেন সাধারণ মানুষ। কেউ ভিড় ঠেলে হাঁটছেন, কেউ খোলা আকাশের নিচে ঘাসে বসে গল্প করছেন। আবার অন্যদিকে খাবার দোকানগুলোর আশেপাশে গাদাগাদি করে বসে আড্ডা দিচ্ছেন কেউ, কেউ খাবার খাচ্ছেন আবার কেউবা পালন করছেন জন্মদিন। রবীন্দ্র সরোবরের খোলা জায়গায় খাবারের দোকান আছে চারটি। খাবারের দোকানের সামনে এবং পাশে আছে বসার ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট দূরত্বে টেবিল বসিয়ে কিংবা জনসমাগম পরিহার করে সীমিত মানুষের জন্য ব্যবস্থা করার নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না কেউ।
এই জায়গায় স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে দোকানমালিকরা উদাসীন। ক্রেতাদের মধ্যেও নেই করোনার আতঙ্ক। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় না রেখেই চলছে সবই। দোকানিদের দাবি, হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা আছে কিন্তু খুঁজতে গিয়ে তেমন কিছুই চোখে পড়েনি। ক্রেতাদের কাছে হাত ধোঁয়া কিংবা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থার কথা জানতে চাইলেও কেউই তেমন কিছু বলতে পারেননি। সুরক্ষার বিষয়েও সেখানে কোথাও কিছু লেখা নেই। রবীন্দ্র সরোবরের জুস বার অ্যান্ড কাবাবের ম্যানেজার বাবু বলেন, ‘হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে মানুষ অসেচতন।’ মানুষকে আপনারা উৎসাহিত করছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি কোনও জবাব দেননি।
রবীন্দ্র সরোবরে মানুষের এমন সমাগম দেখে অনেকই পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নানা মন্তব্য করেন। তারা বলেন, দেশে করোনা নেই। মানুষের এ ধরনের সমাগম দেখে উদ্বিগ্ন ওই এলাকার বাসিন্দারাও। রবীন্দ্র সরোবর সংলগ্ন এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, ‘প্রতিদিনই এই চিত্র দেখি বাসার বারান্দা থেকে। যখন সবকিছু বন্ধ ছিল তখন এই জায়গা খা-খা করতো। মানুষের এভাবে বেপরোয়া চলাফেরায় আমরাও শঙ্কিত। কারণ এখানে বেশির ভাগই বাইরে এলাকা থেকে আসেন। আমরা চাইলেও করোনার মধ্যে এই ভিড়ের মধ্যে হাঁটতে পারি না।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের বেপরোয়া চলাচল দেশের করোনার সংক্রমণকে দীর্ঘায়িত করবে। সরকারের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ড. আবু জামিল ফয়সেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোথাও কেউই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছে না। এতে সংক্রমণ দীর্ঘায়িত হবে। এভাবেই চলতে থাকবে। মানুষ প্রতিদিন ২০-২২ জন করে মারা যাবে। আসন্ন শীতে করোনার একটা ভয়াবহ রূপ আমরা দেখতে পারি। শীতে নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে সংক্রমণ অনেক বেড়ে যেতে পারে। সংক্রমণ বেড়ে গেলেই পাশাপাশি মৃত্যুও বাড়বে। এছাড়া যারা অন্যান্য রোগে ভুগছেন তাদের চিকিৎসা পেতে কষ্ট হয়ে যাবে। চিকিৎসা আগেও ব্যাহত হয়েছে, আমরা আগের অবস্থায় এখনও ফেরত যেতে পারিনি। এটা যেতে অনেক সময় লাগবে।’