উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ

নিজাম উদ্দিন খান নীলুসনদ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে নড়াইল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নীলুর বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এইচএসসি পাস অথচ নির্বাচনি হলফনামায় নিজেকে এমএসসি পাস বলে উল্লেখ করেছেন। তার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সার্টিফিকেট জাল মর্মে নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তার এলাকার একাধিক ব্যক্তি এবং নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বী অভিযোগ করে প্রতিকার চেয়েছেন।

অভিযোগের কপি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চিঠিতে এসব সার্টিফিকেটের বিষয়ে বক্তব্য বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নিজাম উদ্দিন। সেই নির্বাচনের হলফনামায় নিজেকে এমএসসি পাস হিসেবে উল্লেখ করায় অনেকের সন্দেহ হয়। হলফনামায় দেখা যায়, তিনি এমএসসি ডিগ্রিধারী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়েছেন। হলফনামায় তিনি ‘আমেরিকান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালের এমএসসি পাস সনদ সংযুক্তি দিয়েছেন। ওই সনদে উল্লেখ করা হয়েছে ‘ফ্যাকাল্টি অব হিউম্যান সায়েন্স’ থেকে তিনি ‘মাস্টার্স অব সোশ্যাল সায়েন্স’-এ এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

অভিযোগের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চিঠি নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি তার কাছে বিভিন্ন ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি দিয়ে এ দুটি সার্টিফিকেটের বিষয়ে জানতে চান। তার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন জানায়, ২০০৬ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়! তবে, এর বিরুদ্ধে তারা রিট করে এবং পরে আরেক ঠিকানায় কার্যক্রম চলছে বলে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষে তদন্ত করে দেখা যায়, তাদের দেওয়া ঠিকানায় কোনও ফ্লোর, স্পেস, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কোনও সুযোগ-সুবিধার অস্তিত্ব নেই। অর্থাৎ ওই ঠিকানায় এমন কোনও বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধের আগে অনুমোদিত প্রোগাম ছিল মাত্র দুটি। সেগুলো হলো– বিবিএ ইন ম্যানেজমেন্ট এবং বিবিএ ইন মার্কেটিং।

আর নিজাম উদ্দিন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ১৯৯৪ সালের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত বিএ পরীক্ষায় পাস করেছেন মর্মে সনদ দাখিল করেন। উক্ত সনদে রোল পি- ৪৪০৮২, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৫৮৩০, শিক্ষাবর্ষ ১৯৯৪! জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গত ১৯ অক্টোবর এক চিঠিতে কবিরুল হককে জানায়, এই রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরে একই কলেজ থেকে অন্য এক ছাত্র পাস করেন, যার নাম নাজমুল বারী। রোল ও রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী নিজাম উদ্দিন নামের মিল নেই। 

বিএ সনদের বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠিএদিকে হলফনামায় ও ভোটার আইডি কার্ডের তালিকায় তার নাম নিজাম উদ্দিন খান নীলু লেখা আছে কিন্তু বিএ পাসের সনদে লেখা আছে নিজামুদ্দিন খান। এসএসসি, বিএ ও এমএসসিতে তার নামের বানান তিন রকম!

এ দুটি বিষয়ে জানতে চাইলে কবিরুল হক মুক্তি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এলাকার সবাই নিজাম উদ্দিনের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে জানেন। তিনি হলফনামায় এমএসসি পাস উল্লেখ করায় অনেকের সন্দেহ হয়। তারা এসে আমার কাছে অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি দিই। পরে এ দুটি প্রতিষ্ঠান জানায়, এসব সনদ তাদের দেওয়া নয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন খান নিলু বলেন, ‘আমি সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করেছি। কখনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদেশ-নির্দেশের বাইরে যাইনি। এটা যেমন আমার শক্তিশালী দিক, একই সঙ্গে এ কারণেই অনেকে আমার বিরোধিতা করেন। আমার সম্পর্কে যে অভিযোগ উঠেছে সেটা নোংরা রাজনীতির অংশ। এটা অপপ্রচার এবং ষড়যন্ত্র। যদি সনদ জাল হয়ে থাকে তাহলে আইন-আদালত আছে তারা বিষয়টা দেখবে, সেখানেই প্রমাণ হবে সত্যি না মিথ্যা।’

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সভাপতি বদিউল আলম মজুমদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘জাল সনদ দেওয়ায় ওই চেয়ারম্যান নির্বাচনের অযোগ্য ছিলেন। এখন যদি কোনও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতের দারস্থ হন তবে তার উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ বাতিল হবে।’

উল্লেখ্য, উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ (সংশোধিত আইন ২০১১)-এর ধারা ১০-এ বলা হয়েছে যে, চেয়ারম্যান তার দায়িত্ব গ্রহণের আগে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের স্বত্ব, দখল, স্বার্থ আছে এমন সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণ লিখিতভাবে দাখিল করবে। একই আইনের ধারা ১৩(১)-এর (অ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনও চেয়ারম্যান অসদাচরণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি এই পদ থেকে অপসারিত হবেন। উপধারা (অ)-এ বলা হয়েছে, অসদাচরণ বলতে ক্ষমতার অপব্যবহার, ধারা ১০ অনুযায়ী সম্পত্তি সম্পর্কিত ঘোষণা দেওয়া কিংবা অসত্য তথ্য সম্বলিত হলফনামা প্রদান করা।