খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর গোসসা নিবারণী পার্কের কাজ শুরু হয়। পরের বছরের ২৭ জানুয়ারি এ কাজের উদ্বোধন করেন তখনকার মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। সে সময় বলা হয়েছিল, পরবর্তী ৯ থেকে ১০ মাসের মধ্যেই এই পার্কের নির্মাণ করা শেষ করা হবে। কিন্তু এরই মধ্যে তিন দফায় সময় বাড়ানোর পর গত ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু এখনও প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। সর্বশেষ গত ১০ জুন পার্কটির নির্মাণ কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এসময় তিনি কাজের অগ্রগতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি পার্কটিতে আশপাশের যানজট নিরসনের জন্য পার্কিং ব্যবস্থা রাখান নির্দেশনা দেন।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ২৯ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত উদ্যানটির সংস্কার কাজে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। পরে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ৮৬ কোটি ৮৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা করা হয়। সর্বশেষ আরও কয়েকটি প্যাকেজের কাজ যুক্ত হওয়ার পর এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৯৫ কোটি টাকা। পার্কে বর্তমানে তিনটি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে বেশ কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়। সেসব কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। পার্কের সংস্কার কাজ করছে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বরাদ্দের ৪৫ শতাংশ বিল উঠিয়ে নিয়েছে তারা। এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রবিবার (৮ নভেম্বর) পার্কের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্পের পুরো এলাকা নীল রঙের টিন দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। প্রবেশপথটি তালাবদ্ধ। দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি সদস্যও কোনও কথা বলতে রাজি হননি। ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে তিনি সেই সুযোগও দেননি।
পার্কের কাজের ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা নাসিরুল হাসান বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে দেখছি, পার্কের চার দিকে টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরাও করা। কিন্তু ভেতরে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেটা আমরা কেউই জানি না। কাউকে ভেতরে ঢুকতেও দেওয়া হচ্ছে না। এখন শুনছি—এক বছরের কাজ নাকি তিন বছরেও শেষ হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘কবে পার্ক চালু হবে, আর আমরা গোসসা নিবারণ করবো, সবই তো স্বপ্ন মনে হচ্ছে।’
পার্কটির নকশা তৈরি ও নির্মাণ কাজে শুরু থেকে যুক্ত ছিল বিশিষ্ট স্থপতি রফিক আজমের প্রতিষ্ঠান ‘সাতত’। তিনিও পার্কের কাজের অগ্রগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের বিষয়ে আরও অনেক আগেই আমি তাগাদা দিয়েছি। কাজ আরও দ্রুত করা উচিত।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক, পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উন্নয়নের নামে একটি পার্ককে বছরের পর বছর ফেলে রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। খুব দ্রুত পার্কের উন্নয়নকাজ শেষ করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত।’
প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যয় বৃদ্ধির কিছু কারণ রয়েছে। প্রকল্পে অনেক কম্পোনেন্ট বাড়ানো হয়েছে। এজন্য নকশারও পরিবর্তন করতে হয়েছে। যে কারণে ব্যয়ও বেড়েছে। এরপরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কিছু অবহেলা আছে বলে আমরা মনে করি।’