শুধু ‘অনলাইন সেবা’ নিয়েই ৫ হাজার অভিযোগ!

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গত ৭ বছরে অন্তত ৫ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে। ধীরে ধীরে অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা।   ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় এমন কাজ না করার জন্য ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান জানান তিনি।

বুধবার (১১ নভেম্বর)  ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক গণশুনানিতে তিনি এই আহ্বান জানান।

গণশুনানিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছেন, তা এক এক করে তুলে ধরেন।  ই-কমার্স ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা হয় গণশুনানিতে।         

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, ‘২০১৩ সালের পর থেকে আমার এখানে অন্তত ৫ হাজার অভিযোগ এসেছে। মানুষ একটা জিনিস অর্ডার দিলো, কিন্তু সেটা পেলো না। লোভনীয় সব অফার দেওয়া হচ্ছে, ১০০-১৫০% ক্যাশব্যাক অফার দেওয়া হয়। আমি জানি না কীভাবে দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমি সেদিন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সেমিনারে বলেছিলাম, ই-কমার্স তো একটি ভালো ব্যবসা। ২০১৩ সালের পর থেকে আমার এখানে অন্তত ৫ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। এখনও ৩ হাজার ২০০ অভিযোগ প্রক্রিয়াধীন আছে। যতদিন যাচ্ছে ই-কমার্স নিয়ে অভিযোগ জমা পড়ছে। ই-কমার্সের সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন, আপনারা এমন করে শর্ত জুড়ে দেন  ৩-৪ পাতার, এ দেশের ভোক্তারা তা পড়বে না। শর্তাবলি কেউ ভালো করে পড়েন না। শুধু ক্যাশব্যাক অফার দেখেন ভোক্তারা। ই-কমার্স নিয়ে যারা কাজ করেন আমি তাদের অনুরোধ করবো—মানুষের কল্যাণের জন্যই কিন্তু আমরা সবাই কাজ করি। লাভের জন্য ব্যবসা করবেন ঠিক আছে, জনকল্যাণও কিন্তু দেখতে হবে।’

ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে গণশুনানিতে বলা হয়,  আমাদের কাছে যেসব অভিযোগ আসে তার মধ্যে আছে—সময় মতো ডেলিভারি না দেওয়া, ১০টি পণ্যের মধ্যে হয়তো ৫টি বাদ দিয়ে দিচ্ছেন, কিছু প্রোডাক্টে উৎপাদন আর মেয়াদের তারিখ পরিষ্কার থাকে না। আবার এমন ঘটনাও থাকে যে, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ডেলিভারি হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে তো ক্রেতাদের দেখে কেনার সুযোগ নেই। কারণ, আপনারা তো দেখেই প্রোডাক্টটি ক্রেতার কাছে পাঠাচ্ছেন। আপনারা যখন বলছেন এক  ঘণ্টায় ডেলিভারি, তখন অবশ্যই আপনাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিত। আপনি যেটা করতে পারবেন সেটিই করবেন। সেটা না পেরে দেখা যাচ্ছে একদিন থেকে তিনদিন পার হয়ে যাচ্ছে। ক্রেতাদের একটা আশা আপনাদের কাছে পণ্য সময় মতো পৌঁছে দেওয়ার। আপনাদের সেই প্রতিশ্রুতি পালন হচ্ছে না।

গণশুনানিতে ই-কমার্স ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এমন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের কাছে তাদের সেবা সম্পর্কে প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়ে চালডাল ডটকমের প্রতিনিধি জানান, আমরা একঘণ্টার মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার চেষ্টা করি। একঘণ্টার মধ্যে দিতে না পারলে এসএমএস কিংবা কলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের দেরি হওয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেই সময়টাতে আমাদের অতো লোকবল থাকে না। এই কয়দিনে যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলো করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের মধ্যে হয়েছিল। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকি যে, একঘণ্টার মধ্যে যেন আমরা ডেলিভারি দিতে পারি।

চালডাল ডটকমের প্রতিনিধি আরও জানান, ক্রেতাদের অভিযোগ পেলে আমরা সেটি দ্রুত নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করি। কিন্তু ক্রেতারা আমাদের না জানিয়ে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ দিয়ে দেয়।

এ সময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক শামীম আল মামুন নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে চালডাল ডটকমের প্রতিনিধিকে জানান, তার এক আত্মীয়ের আম ডেলিভারি নিয়ে কালক্ষেপণ করা হয়েছিল গত জুন মাসের ১৩ তারিখ। সেটা দেওয়ার কথা ছিল ১৪ জুন দুপুর ২টায়, কিন্তু আম আসেনি। আমাকে জানানোর পর আমি কথা বললাম কাস্টমার কেয়ারে। জানানোর পর পরদিন দেওয়ার কথা থাকলেও সেদিনও আসেনি। তারপর পরদিনও দেয়নি। এর পরদিন টাকা ফেরত দিয়েছে আমার হস্তক্ষেপে। আমি সেখানে আমার দাফতরিক পরিচয় বলিনি। আমি যখন কঠোরভাবে কথা বললাম, তখন আমাকে টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

চালডাল ডটকমের প্রতিনিধি জানান, জুন মাসে প্যান্ডেমিকের টাইমে সবকিছু লকডাউন ছিল। ওই সময় আমাদের যতটা সাপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল, আমরা দিতে পারিনি। কারণ, আমাদের তিনগুণ অর্ডার বেশি ছিল। এমন হতে পারে যে, আম আমাদের স্টকে ছিল না, জোগাড় করতে একটু সময় লাগছিল। এ সময় ক্রেতা এসএমএস পেয়েছিল কিনা জানতে চাইলে শামীম জানান, আমি হস্তক্ষেপ করার পর এসএমএস এসেছে যে, পরের দিন দেবে। এ ধরনের অভিযোগ খুব কমন। হেল্প ডেস্কে যিনি কথা বলেছিলেন, তিনি কাস্টমার ফ্রেন্ডলি ছিলেন না।