নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালটির একাধিক চিকিৎসক-কর্মকর্তা বলছেন, শিশুদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই নাজুক। অসুস্থ হয়ে আসা শিশুদের জন্য এ হাসপাতাল একেবারেই উপযুক্ত নয়।
হাসপাতালের কেবিনে শিশু নিয়ে থাকা এক বাবা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভিআইপি কেবিনের ছাদ থেকে একটু একটু করে পলেস্তারা খসে পড়ে। রুমে এসি ছাড়লে পুরো ঘরে জলীয়বাষ্প জমে ঘর স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়। এসি বন্ধ করলে বাতাস চলাচলও বন্ধ। তখন শ্বাসকষ্ট হবে যে কারও। আবার জানালা খুলে দিলে ভুরভুর করে ঢোকে মশা। কক্ষের ভেতর বিপজ্জনকভাবে ঝুলে থাকে বিদ্যুতের তার। ফ্রিজ খুললে তেলাপোকা। বাতি নেভালে বিছানায়ও উঠে পড়ে।
দোতলায় উঠতেই নদর্মার ড্রেন। সুয়ারেজ লাইনের কোথাও ঢাকনা নেই। বৃষ্টি হলে মলও ভেসে বেড়ায়। চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালের ভেতর এমন কোনও ওয়ার্ড-কেবিন নেই যেখানে তেলাপোকা, বিড়াল নেই। অস্ত্রোপচারের কক্ষে মাছিও ওড়ে!
এক চিকিৎসক বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী একটি হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ড থাকবে পরিষ্কার। অথচ ওটা মেডিসিন ওয়ার্ডের চেয়েও নোংরা। এখন সারা দুনিয়ায় কথা চলছে, পোস্ট অপারেটিভে দেওয়া অ্যান্টিবায়োটিক কীভাবে কমানো যায় তা নিয়ে। আর আমাদের এখানে পোস্ট অপারেটিভ ইনফেকশন রোধ করার জন্য হাই ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে চোখ বন্ধ করে।’
সার্জারি ওয়ার্ডের ফাঁকা বেডে দেখা গেলো আয়েশ করে ঘুমাচ্ছে বিড়াল। বছর দেড়েক আগে একটি শিশুকে বিড়াল মুখে নিয়ে দৌড় দিয়েছিল—এমন ঘটনাও নাকি ঘটেছে এই হাসপাতালে!
চিকিৎসকরা বলছেন, শিশু হাসপাতালে একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ডোনেশন দিয়ে থাকেন। অথচ তার ছিটেফোঁটাও উন্নতিতে ব্যয় হয় না।
তারা বলছেন, শিশু হাসপাতালে যে আয় হয় সেটা দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের মতো সেবা দেওয়া সম্ভব। নীতি নির্ধারকদের যদি মানসিকতা থাকে, তবে শিশু হাসপাতালের আগাগোড়া শীতাতপ যন্ত্র লাগিয়ে দেওয়া যাবে।
এখন কিছু কাজ হচ্ছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. প্রবীর কুমার সরকার। তিনি বলেন, ‘ড্রেনেজ সিস্টেম নিয়ে কাজ হচ্ছে। সব ঠিক থাকলে চলতি মাসেই কাজ শুরু হবে।’
এখন রোগীর ধারণক্ষমতা অনুযায়ী দরকার ৩৫ ইঞ্চি ড্রেন। সঙ্গে রয়েছে পঙ্গু হাসপাতাল। সে হাসপাতালের ক্যান্টিনের পানিও এ ড্রেনে এসে পড়ে।
অপরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখানে আমার বলার কিছু নেই, আমি আসলে পারছি না।’